ধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

শেষ স্টেশন—যেখানে প্রত্যেক যাত্রীকে অবধারিতভাবে নেমে যেতে হয়

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইবাদতে মনোযোগ ও সচেতনায় থাকা আমাদের জীবনের এক গভীর চেতনা। সুরা আনবিয়া‑র ৩৫ নম্বর আয়াতে হুজ্জাত‌ুল ইসলাম‌ ওয়াল মুসলিমিন জাওয়াদ মুদ্দাসি‑র মতো শিক্ষণীয় ব্যাখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে, যে এই দুনিয়া যেমন এক ‘অস্থায়ী’ ভ্রমণ, তেমনি প্রতিটি মানুষ এই ভ্রমণে এক পর্যায়ে নামতে বাধ্য — এভাবে আল্লাহ্ আমাদের আত্মাকে বিশেষ অর্থে প্রস্তুত করে দেন।

১. আয়াত

«كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ»
প্রত্যেক প্রাণ একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমরা তোমাদেরকে ভালো ও মন্দের মাধ্যমে এক পরীক্ষা করব; এবং আমাদেরই দিকে তোমরা ফিরে আসবে।[1]

২. প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা ও তাফসীর

(ক) মৃত্যুর অনিবার্যতা

১.আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে “كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ” — অর্থাৎ প্রতি একটি প্রাণই মৃত্যুস্বাদগ্রাহী হবে।

২.অর্থ: এই দুনিয়ায় কেউ চির‑অমর নয়; আমরা সবাই একটি মায়াবী ভ্রমণে আছি, যেখানে একদিন এলেই নামা বাধ্য।

৩.তাফসীরে বলা হয়েছে, এই আয়াত মানুষকে অবহিত করে যে সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দেওয়া উচিত।

(খ) পরীক্ষা‑পরীক্ষণ: ভালো ও মন্দ

১. আয়াতের মাঝখানে বলা হয়েছে: “وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً” — অর্থ, “আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও শুভ‑উভয় মাধ্যমে পরীক্ষা করব।

২. এখানে ভালো অর্থে যেমন — সুস্থতা, সমৃদ্ধি, সুখ‑শান্তি; মন্দ অর্থে যেমন — রোগ, দারিদ্র্য, বিপর্যয়।

৩. তাফসীরে বলা হয়েছে: মন্দে ধৈর্য বলিয়ে দেখা হয়, শুভে কৃতজ্ঞতা ও নম্রতা পরীক্ষিত হয়।

(গ) প্রত্যাবর্তন ও হিসাব‑নিকাশ

১.শেষ অংশে বলা হয়েছে: “وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ” — “আর তোমরা আমাদেরই দিকে ফিরে আসো।

২.অর্থ: এই দুনিয়া শেষ নেই; একদিন আমাদের সকল কার্য‑কলাপের হিসাব হবে, এবং আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন ঘটবে।

৩.তাফসীরে উল্লেখ আছে: এই বিশ্বাস মানুষকে জীবনের উদ্দেশ্য মনে করিয়ে দেয়, এবং আজকের কাজকে আগামী দিনের গন্তব্যের দিকে নির্দেশ করে।

৩. জীবনে প্রয়োগ ও শিক্ষা

১- এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—যে দুনিয়া চির‑স্থায়ী বাড়ি নয়, বরং একটি সাময়িক ভ্রমণ।

২- তাই ভালো অবস্থায় ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা এবং কষ্টে ধৈর্য ও ইবাদতে মনোযোগ জরুরি।

৩- সবকিছুর পিছনে একটি পরীক্ষা‑পরীক্ষণ চলছে; ফলাফল নির্ধারিত হবে আমাদের নিয়তের ও আমলের দ্বারা।

৪- জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আমরা “শেষ স্টেশন” আসছে এমন ভাবাবেশ দিয়ে চললে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গা বদলায়—উদাসীনতা কমে, দায়িত্ববোধ বাড়ে।

সুতারাং,এই আয়াত আমাদের দৃঢ়ভাবে শিক্ষা দেয়— দুনিয়া হলো স্থায়ী না, পরীক্ষার ভিত্তি, আর আমাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন:

১- প্রতিদিনের জীবনকে এক ধরনের ইবাদত বানিয়ে নেওয়া যায় — ভালো অবস্থায় কৃতজ্ঞতা, দুঃসময়ে ধৈর্য ধরে।

২- এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে “শেষ স্টেশনের পথে যাওয়ার পদক্ষেপ” হিসেবে ভাবা যায়, যেখানে নামা অবধারিত।

৩- যিনি ইতিমধ্যে প্রস্তুত, তিনি সাফল্য পাবে; আর যিনি উদাসীন থাকবে, সেই উদাসীনতা পরে শোক ও আফসোসের কারণ হবে।

আসুন, এই মুহূর্তকে উপলব্ধি করি এবং জীবনের এ অস্থায়ী ভ্রমণকে মহিমান্বিত করি। আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে তাঁর সামনে উত্তম অবস্থা সহকারে হাজির করার তাওফিক দান করুন।

[1]সূরা আনবিয়া ,আয়াত ,৩৫।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button