ধর্ম ও বিশ্বাসবিশ্ব

ইবাদতে আনন্দ লাভ ও উদাসীনতা দূর করার সূত্র

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানুষের জীবনে যেমন প্রতিটি সুন্দর জিনিসের শত্রু বা ক্ষতিকর দিক থাকে, তেমনি ইবাদতেরও একটি বড় শত্রু আছে—স্লথতা ও অলসতা। এই অলসতা শুধু ইবাদত থেকে আমাদের দূরে রাখে না, বরং এটি এই ইঙ্গিতও দেয় যে মানুষ ইলাহী তাওফিক—অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ—থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপরীতে, ইবাদতে উদ্যম, আনন্দ ও তৃষ্ণা অনুভব করা আল্লাহর অন্যতম বড় উপহার, যা মানুষকে দুনিয়া ও শেষ জীবনের সাফল্যের পথে এগিয়ে নেয়।

যেহেতু পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসেরই কোনো না কোনো ক্ষয় বা বিপর্যয় আছে, তেমনি ইবাদতেরও একটি আফত (ক্ষতি) আছে—আর সেটাই হলো অলসতা। ইবাদতের ক্ষেত্রে মন্থরতা, গড়িমসি ও অনিচ্ছা—এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তাওফিক হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ। কারণ ইবাদতে কর্মচাঞ্চল্য ও আন্তরিক আনন্দ—এ তা সাধারণ অনুভূতি নয়; বরং এটি মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা বান্দার দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের কল্যাণ বয়ে আনে।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) সাহিফা সাজ্জাদীয়ার ২০তম দু’আ-তে এভাবে আবেদন করেছেন—

«لاَ تَبْتَلِیَنِّی بِالْکَسَلِ عَنْ عِبَادَتِکَ.»
তোমার ইবাদত থেকে আমাকে অলসতা ও স্লথতার পরীক্ষায় ফেলো না।

সৃষ্টি-উদ্দেশ্য: ইবাদত পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন—

«وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِیَعْبُدُونِ.» (ذاریات، 56)
আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করিনি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে—শুধু যেন তারা আমার ইবাদত করে।

সুতরাং, ইবাদত শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং মানুষকে পরিপূর্ণতার পথে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম।

ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর সন্তানদের একজনকে উপদেশ দিয়ে বলেন—

«إِیَّاکَ وَ اَلْکَسَلَ وَ اَلضَّجَرَ فَإِنَّهُمَا یَمْنَعَانِکَ مِنْ حَظِّکَ مِنَ اَلدُّنْیَا وَ اَلْآخِرَةِ.» (کافی، ج 5، ص 85)
অলসতা ও উদাসীনতা থেকে দূরে থাকো; কারণ এগুলো তোমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত—উভয়ের কল্যাণ ও ফায়দা থেকে বঞ্চিত করে।

মানুষ যখন বুঝে যায় কোন কাজ স্থায়ী, কোন কাজ ক্ষণস্থায়ী—তখন সে তার মন, শ্রম ও উৎসাহ ঢেলে দেয় স্থায়ী কাজে। এ সম্পর্কে ইমাম আলী (আ.) বলেন—

«اَلْمُؤْمِنُ یَرْغَبُ فِیمَا یَبْقَی وَ یَزْهَدُ فِیمَا یَفْنَی.» (بحارالانوار، ج 75، ص 26)
মুমিন সেই কাজে আকৃষ্ট হয় যা স্থায়ী, আর সে বিমুখ হয় সেই সব কাজ থেকে যা ক্ষণিকেই নষ্ট হয়ে যায়।

তবে মনে রাখা উচিত—ইবাদতে আনন্দ পাওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর করুণা হলেও, সে করুণা পাওয়ার জন্য মানুষের প্রয়াসও প্রয়োজন। আমরা প্রয়াস দেব; তাওফিক দেবেন তিনি। একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ বলেন—

«إِذَا عَلِمْتُ أَنَّ اَلْغَالِبَ عَلَی عَبْدِیَ اَلاِشْتِغَالَ بِی نَقَلْتُ شَهْوَتَهُ فِی مَسْأَلَتِی وَ مُنَاجَاتِی…»
যখন আমি দেখি যে কোনো বান্দা আমার স্মৃতিতে ডুবে গেছে, তখন আমি তার মনকে দোয়া ও আমার সঙ্গে অন্তরের কথোপকথনে নিবদ্ধ করে দিই…
…এরা হলো আমার সত্যিকার বন্ধু, প্রকৃত বীর। এমনকি পৃথিবীতে শাস্তি নাজিল করার ইচ্ছা করলে, এদের কারণে সেই শাস্তি সরিয়ে দিই।(বিহারুল আনোয়ার খন্ড৯০, পৃ১৬২।)

আতএব ,ইবাদত আমাদের আত্মাকে জাগ্রত করে, হৃদয়কে পরিষ্কার করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। কিন্তু অলসতা ও উদাসীনতা সেই দরজাটি বন্ধ করে দেয়, যেখানে আল্লাহ্‌র নৈকট্য, প্রশান্তি এবং আত্মিক আনন্দ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button