সাত হাজার বছরের ইতিহাসে কীভাবে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবীর আবির্ভাব সম্ভব?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মানবসভ্যতার ইতিহাসে নবীদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা ঘুরে বেড়াচ্ছে—১২৪ হাজার নবীর উল্লেখকে ৭ হাজার বছরের মানব ইতিহাসের সাথে মিলিয়ে ধরে দাবি করা হয়, যেন “প্রতি ১৬ দিনে একজন নবী” পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু এই ধারণা ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব বা যুক্তি—কোনোটির সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নবীদের সংখ্যা নিয়ে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ইতিহাস সম্পর্কে অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করছেন যে, ১২৪ হাজার নবী সময়ক্রমে একে একে পৃথিবীতে এসেছেন; এবং মানব সভ্যতার আনুমানিক ৭০০০ বছরের ইতিহাসকে ১২৪ হাজার নবীতে ভাগ করে বলা হচ্ছে—”প্রতি ১৬ দিনে একজন নবী জন্মগ্রহণ করেছেন!”
কিন্তু এই ব্যাখ্যা পুরোপুরি ভুল। কারণ এটি ধরে নিচ্ছে, একজন নবীর মৃত্যু ঘটার পরেই পরবর্তী নবীর আগমন শুরু হয়েছে—যেন নবুওয়াত বা বাণী প্রেরণের ইতিহাস ছিল সরল রেখার মতো ক্রমানুসারী।
বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন
ইতিহাস এবং ধর্মীয় উৎস থেকে জানা যায়, নবীরা কখনোই একক ধারায় একের পর এক আসেননি। বরং বহু নবী একই সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর কাছে প্রেরিত হয়েছেন। অর্থাৎ নবীদের আগমন ছিল সমান্তরাল, ধারাবাহিক নয়।
সহজ উদাহরণে ব্যাখ্যা
একটি পরিবারে দাদা, বাবা এবং সন্তান দীর্ঘ সময় একসঙ্গে বসবাস করতে পারেন। কিন্তু যদি কেবল মৃত্যুর সাল লিখে রাখা হয়, তাহলে নামগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজানো থাকবে—যেন তারা একে অপরের পরে এসেছেন। অথচ বাস্তবে তারা দীর্ঘ সময় একই সঙ্গে ছিলেন। নবীদের ক্ষেত্রেও ঠিক এটাই ঘটেছে।
ইতিহাসে একসঙ্গে একাধিক নবীর উদাহরণ
১- হযরত ইব্রাহিম, লুত ও শুয়াইব (আ.)—একই যুগে, ভিন্ন জাতিতে নবী ছিলেন।
২- হযরত মুসা ও হারুন (আ.)—একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, পাশাপাশি তৎকালীন সময়ে আরও কয়েক নবী ছিলেন।
৩- বনী ইসরাইলের বিভিন্ন সময়ে এক প্রজন্মের মধ্যেই একাধিক নবীর উপস্থিতি দেখা যায়।
৪- এমনকি নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে—এক দিনে সত্তরজন বা কোনো বর্ণনায় একশত নবীকে হত্যা করা হয়েছিল।
এ থেকে পরিষ্কার, ইতিহাসে বহু নবী একই সময়ে পৃথিবীতে সক্রিয় ছিলেন। তাই “অবশ্যই একজনের পর অন্যজন”—এ ধারণাটি বাস্তবসম্মত নয়।
সারসংক্ষেপ:
১.নবীরা একে একে ধারাবাহিকভাবে আসেননি।
২. বহু নবী একই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করতেন।
৩.প্রতিটি জাতির জন্য আলাদা নবী প্রেরিত হয়েছেন।
সুতরাং, “প্রতি ১৬ দিনে একজন নবী”—এ ধরনের গণনা সম্পূর্ণ ভুল ধারণার ওপর দাঁড়ানো, যার কোনো ঐতিহাসিক বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
সূত্র: ১.মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল-কুলাইনি, আল-কাফি, গবেষণা ও সম্পাদনা: আলি আকবর গাফারি এবং মুহাম্মদ আখুন্দি, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ১১৬–১১৭। তেহরান: দারুল-কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, চতুর্থ সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি।
২.মাসউদী, আলি ইবনে হুসাইন,ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)–এর ওসিয়তের প্রমাণ, পৃষ্ঠা ৭৬, কোম: আনসারিয়ান পাবলিকেশন, তৃতীয় সংস্করণ, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দ।



