নামহীন সত্তা: যে নারীরা পরিবারের অংশ নয়, শুধু অনুসারী
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: প্রাচীন রোমে নারী পরিবার ও সমাজের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো না; পরিবার শুধুমাত্র পুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত ছিল। নারীরা ছিলেন আনুগত্যের অধীনে, অধিকারহীন এবং সামাজিক ও আইনি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। ইতিহাসই সাক্ষী—কীভাবে আইন এবং সামাজিক রীতি নারীর মর্যাদা নস্যাৎ করেছিল। আল্লামা তাবাতাবাই (রহ.)–এর তাফসির আল-মিজান থেকে জানা যায়, কেলদানি, আশুরি, রোমান ও গ্রিক সমাজে নারীর অবস্থান অত্যন্ত সীমিত ও দমনমূলক ছিল।
প্রাচীন কেলদানি, আশুরি, রোমান ও গ্রিক সমাজে নারীর অবস্থা
যে জাতিগোষ্ঠীর নাম পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের রীতিনীতি এবং আইন মূলত ঐতিহ্য ও অঞ্চলভিত্তিক অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করত; কোন গ্রন্থ বা শাসনবিধি কার্যকর ছিল না। তবে কেলদানি ও আশুরি জাতির ক্ষেত্রে হাম্মুরাবি আইনের প্রভাব স্পষ্ট—এখানে নারীকে স্বামী বা পরিবারের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যী ধরা হতো, স্বাধীনতা ছিল না, সিদ্ধান্ত নিতে পারত না, কাজ করতে পারত না।
নারী যদি স্বামীর আদেশ অমান্য করত, নিজে স্বাধীন কোনো কাজ করত—পুরুষ তার ওপর আইনগত বা ব্যক্তিগত শাস্তি আরোপ করতে পারত। এমনকি স্ত্রীর ভুল বা অপব্যবহারের জন্য তাকে আদালতে অভিযোগ করতে পারত, এবং শাস্তি হিসেবে তার মৃত্যুর বিধানও ছিল।
রোমান আইন এবং নারীর স্থান
রোম, প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর মধ্যে, প্রায় ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আইনি কাঠামো তৈরি শুরু করে। প্রথমদিকে এটি পরিবারের ভেতরে কিছু স্বাধীনতা দেয়—কিন্তু সেই স্বাধীনতা ছিল কেবল পুরুষ অভিভাবকের অধীনে।
১.পরিবারের পূর্ণ কর্তৃত্ব—পতি বা পিতার হাতে।
২.সন্তান, স্ত্রী, কন্যা—সবই তার আদেশ মানত।
৩.তার ইচ্ছা আইনসঙ্গত, অবাধ ও অক্ষুণ্ণ।
৪.যদি তিনি কোনও নারী বা সন্তানকে হত্যা করতে ইচ্ছুক হতেন, পরিবারের সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে তা মানতে হতো।
নারীরা পরিবারে—স্ত্রী, কন্যা, বোন—পুরুষদের তুলনায় আরও নিম্নতম অবস্থানে ছিলেন। যদিও ছেলে ও পুরুষ সন্তানও প্রধান অভিভাবকের অধীনে থাকত, নারীরা সমাজের অংশ হিসেবে গণ্য হতো না। তাদের অভিযোগ শোনার বা কোনো লেনদেনের বৈধতা মেনে নেওয়ার সুযোগ ছিল না।
অন্যদিকে, পুরুষ সন্তান বা ভ্রাতা অনুমতি পেলেই স্বাধীন হয়ে নিজের জীবন পরিচালনা করতে পারত।
প্রাচীন রোমে নারীর পরিবারে স্থান
১.নারী পরিবারের মূল সদস্য হিসেবে গণ্য হতো না।
২.পরিবার শুধুমাত্র পুরুষদের সমন্বয়ে গঠিত।
৩.নারী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণভাবে অধীন।
৪.সামাজিক ও আইনি আত্মপরিচয়—কোনও প্রভাব বা অধিকার ছিল না।
উত্তরাধিকার ও সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা:
১.কেবল পুরুষদের মধ্যে সম্পর্ক ও উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত।
২.নারী–নারী, নারী–পুরুষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আত্মীয়তার কোনো স্বীকৃতি ছিল না।
৩.স্বামী–স্ত্রী, পিতা–কন্যা, ভাই–বোনের মধ্যে এমন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল না যা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করত।
৪.কেবল প্রাকৃতিক সম্পর্ক, অর্থাৎ সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমেই কিছু সংযোগ ছিল।
৫.এই আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের অভাব এমন পরিস্থিতি তৈরি করত, যেখানে কখনও কখনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ অনুমোদিত হতো।
পরিবার প্রধান বা নারীর অভিভাবক হিসেবে সমস্ত সিদ্ধান্তের অধিকার রাখত।
সূত্র:তাফসিরে আল-মিজান ,খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৫।



