মিডিয়া মিহির: গোত্রভিত্তিক এবং পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠীতে নারী ছিল স্বাধীনতা, মর্যাদা ও মানবিক অধিকারের বাইরে এক বস্তুগত সত্তা। সেখানে নারীর উপর পুরুষের পূর্ণ মালিকানা ছিল—তিনি চাইলে নারীকে বিক্রি করতে, উপহার দিতে, শাস্তি দিতে, এমনকি হত্যা করতে পারত। নারী ছিল শ্রমের উৎস, ভোগের মাধ্যম এবং পুরুষের সম্পত্তি; কিন্তু মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্ব স্বীকৃতি পেত না।
এ বিশ্লেষণ আল্লামা তাবাতাবাই (রহ.)–এর তাফসিরে আল মিজানে (সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮–২৪২) ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া, যেখানে তিনি ইসলাম পূর্ব জাতিগুলোর নারী–অবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করেছেন।
পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠীতে নারীর জীবন: পরাধীনতার নগ্ন ইতিহাস
এই জাতিসমূহ ও আদিবাসী গোত্রগুলোর পুরুষেরা নারীকে কখনো স্বতন্ত্র মানবসত্তা মনে করত না। তাদের বিশ্বাস ছিল— নারী সৃষ্টি হয়েছে পুরুষের জন্য; তার অস্তিত্ব পুরুষের জীবন ও প্রয়োজনের অধীন। নারী ছিল ঠিক পশুর মতো—
অধিকারহীন, সিদ্ধান্তহীন, স্বাধীনতাহীন। নারী জীবনের প্রতিটি ধাপে পুরুষের অভিভাবকত্ব ও মালিকানার অধীন ছিল—
১. বিয়ের আগে পিতার সম্পত্তি,
২. বিয়ের পর স্বামীর মালিকানা।
এ অভিভাবকত্ব ছিল সীমাহীন, প্রশ্নহীন ও কঠোর।
পুরুষের পূর্ণ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ
প্রাচীন পশ্চাৎপদ সমাজে পুরুষ চাইলে:
১.স্ত্রীকে বিক্রি করতে পারত,
২.অন্যের কাছে ঋণ হিসেবে দিতে পারত,
৩.উপহার হিসেবে দিতে পারত,
৪.স্বেচ্ছায় সন্তান উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করতে পারত।
পুরুষের অনুমতিতে স্ত্রীকে শ্রমিক, দাস বা যৌন সেবাদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। নারীর সম্পদ—যদি কিছু থাকত—সেটিও পুরুষের বলে গণ্য করা হতো।
নারীর** অধিকার মানেই পুরুষের অধিকার।
শাস্তি ও নির্যাতনের বৈধতা
পুরুষের ছিল সীমাহীন ক্ষমতা— সে স্ত্রীকে:
১- মারতে পারত,
২- শাস্তি দিতে পারত,
৩- বন্দি করতে পারত,
৪- খাদ্য–পানিহীন ফেলে রাখতে পারত,
৫- এমনকি হত্যাও করতে পারত—এবং এতে কোনো সামাজিক অপরাধ গণ্য হতো না। ক্ষুধার সময় বা উৎসবের মুহূর্তে, কিছু গোত্রে— নারীকে পশুর মতো জবাই করে মাংস খাওয়ার ঘটনাও ছিল প্রচলিত।
শ্রম ও কাজের নিষ্ঠুরতা
নারীর বাধ্যবাধকতাগুলো ছিল দ্বিগুণ:
১.ঘরের কাজ, সন্তানের দায়িত্ব
২.পাশাপাশি সবচেয়ে কঠিন শ্রম—ভার বহন, গবাদি পশুর পরিচর্যা, কাদামাটি বহন, কৃষিকাজ
পুরুষ আদেশ করলে নারীকে চোখ বন্ধ রেখে পালন করতে হতো। ইচ্ছা–অনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না।
এমনকি কিছু গোত্রে রীতি ছিল:সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই নারীকে কাজ শুরু করতে হতো, আর স্বামী বিছানায় শুয়ে নারীর যত্ন নিত! এই দৃশ্য—নির্যাতন ও পরাধীনতার বিবেকহীন সংস্কৃতি।
সারসংক্ষেপ এই সমাজগুলোর নারীরা—
১.মানুষ ছিল না,
২.সম্পত্তিও ছিল না,
৩.বরং মানুষ এবং পশুর মধ্যবর্তী এক ব্যবহৃত সত্তা।
আল্লামা তাবাতাবাই (রহ.)–এর ভাষায়: এসব সমাজে নারীর জীবনে অধিকার বলতে কিছু ছিল না— ছিল শুধু আজ্ঞাপালন, শ্রম এবং নিপীড়ন।
(চলবে….)
সূত্র:তাফসিরে আল-মিজান,খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৯৫।



