ইতিহাসবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

 ‘তুমি আবার ইরানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসবে’— শত্রুদের প্রতি তেহরানের কঠোর বার্তা

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৯ নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরানের রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রস্থ ইনকিলাব স্কয়ারে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) প্রাচীন পারস্য জয়ের স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচনকে ঘিরে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সাম্প্রতিক ইসরায়েল–ইরান ১২ দিনের যুদ্ধের পর এই স্মারক উদ্বোধনকে তেহরানের পক্ষ থেকে সমসাময়িক শত্রুদের উদ্দেশে এক শক্ত বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি:উন্মোচিত স্মৃতিস্তম্ভে সাসানিয়ান সম্রাট শাপুর প্রথমকে ঘোড়ার ওপর বসে থাকতে দেখা যায়। তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন পরাজিত রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ান, যাকে শাপুর তৃতীয় শতকে যুদ্ধে বন্দি করেছিলেন। শাপুরের পেছনে দুই প্রতীকী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে—একজন প্রাচীন পারস্য যোদ্ধা এবং একজন আধুনিক ইরানি সৈন্য। তারা একই বর্শা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, যা অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইরানের প্রতিরোধ-ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা প্রকাশ করে।

দুই যোদ্ধার ঢালে খোদাই করা বার্তা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে: “তুমি আবার ইরানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসবে।”

৪০ বছর বয়সি দর্শনার্থী ফাতেমে রোশান বক্স বলেন, “ইতিহাসে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। ভবিষ্যতেও যারা ইরানে হামলা চালাবে, তাদের একই পরিণতি অপেক্ষা করছে।”

২১ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মঈন বলেন, “আমরা ইতিহাসের বইয়ে এসব পড়েছি। এমন সমাবেশ মানুষের মনোবল বাড়ায়। আমাদের দেশ অতীতেও জয়ী হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।”

শাপুরের মূর্তির পাশেই শহীদ ইরানি সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যানার টানানো হয়। সেখানে ছিলেন ২০২০ সালে বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডার কাসেম সোলেমানি এবং ইসরায়েলি হামলায় শহীদ অ্যারোস্পেস প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত জুনে ইসরায়েল ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালালে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে তেহরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালালে ইসরায়েলেও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

মনোবিজ্ঞানী রোশান বক্স বলেন, “ইতিহাস সাক্ষী যে ইরানি জেনারেলরা বরাবরই অবমাননাকারী ও অহংকারী শক্তিকে দমন করেছে।” তিনি জুনে তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রসঙ্গ টেনে তার মন্তব্য ব্যাখ্যা করেন।

ইনকিলাব স্কয়ারে প্রদর্শিত ব্যানারগুলোতে পারস্য সাহিত্যের পৌরাণিক নায়ক রোস্তমকে শত্রুদের পরাজিত করতে দেখা যায়। অন্য ব্যানারগুলোতে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ, বিশেষ করে ২০১৬ সালে ইরান রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্তৃক মার্কিন নেভি জাহাজ জব্দের ছবিও তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত জুনে তেহরানের উত্তরাঞ্চলের ভানাক স্কয়ারে প্রাচীন নায়ক আরশের ১৬ মিটার উঁচু ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়। তেহরান মিউনিসিপ্যালিটির কর্মকর্তা দাভুদ গুদারজি জানান, স্মারক প্রকল্পটি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ীর নির্দেশনায় পরিকল্পিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি বলেন, “স্মৃতিস্তম্ভটি আপাতত ইনকিলাব স্কয়ারেই থাকবে। পরে এটি তেহরানের প্রধান প্রবেশপথে স্থাপন করা হবে, যাতে বিদেশি কূটনীতিক ও পর্যটকরা প্রথম নজরেই ইরানের ইতিহাস ও প্রতিরোধের বার্তা দেখতে পারেন।”

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button