ধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণহাদিস

ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ ও সবচেয়ে ঘৃণিত পাপ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানুষ যুগে যুগে এই প্রশ্ন করেছে—ইসলামের দৃষ্টিতে কোন কাজ আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম, আর কোনটি তাঁর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত? রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এক হাদীস এই প্রশ্নের গভীর উত্তর দেয়, যেখানে ঈমান, আত্মীয়তার বন্ধন ও সমাজের নৈতিকতা—সব এক সূত্রে গাঁথা হয়ে উঠেছে।

হাদীসের ঘটনা: এক অনুসন্ধিৎসু সাহাবির প্রশ্ন

ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ বর্ণনা করেন যে, খাস‘আম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে প্রশ্ন করল—

جَاءَ رَجُلٌ مِنْ خَثْعَمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، مَا أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فِيهِ؟
فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: الْإِيمَانُ بِاللَّهِ. قَالَ: ثُمَّ مَا؟ قَالَ: صِلَةُ الرَّحِمِ. قَالَ: ثُمَّ مَا؟ قَالَ: الأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ.قَالَ: فَأَيُّ الأَعْمَالِ أَبْغَضُ إِلَى اللَّهِ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللَّهِ. قَالَ: ثُمَّ مَا؟ قَالَ: قَطِيعَةُ الرَّحِمِ. قَالَ: ثُمَّ مَا؟
قَالَ: الأَمْرُ بِالْمُنْكَرِ وَالنَّهْيُ عَنِ الْمَعْرُوفِ

আল-কাফি গ্রন্থে বর্ণিত—ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, খাস‘আম গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন, ইসলামের সর্বোত্তম কাজ কোনটি? রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন: “আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। লোকটি বলল: এরপর কোনটি?রাসূল (সা.) বললেন: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। সে বলল: “তারপর কী? রাসূল (সা.) বললেন: সৎকাজে আহ্বান করা এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখা। এরপর লোকটি আবার জানতে চাইল: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ কী? রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করা। সে বলল:তারপর কী? রাসূল (সা.) বললেন: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। সে বলল: “তারপর কী? রাসূল (সা.) বললেন: অসৎকাজে আহ্বান করা এবং সৎকাজ থেকে বিরত রাখা।

অর্থ ও তাৎপর্য

এই হাদীস আমাদের সামনে ইসলামের নৈতিক রূপরেখা স্পষ্ট করে তোলে।
এর শুরু ও শেষ—দুটি বিপরীত প্রান্তে দাঁড়ানো। একদিকে রয়েছে ঈমান, আত্মীয়তা, ও ন্যায়ের প্রচার, অন্যদিকে রয়েছে শিরক, সম্পর্কচ্ছেদ, ও অন্যায়ের প্রচার।

ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজগুলো মানুষের হৃদয় ও সমাজ উভয়কেই আলোকিত করে।
আর যে কাজগুলো আল্লাহর নিকট ঘৃণিত, তা হৃদয়কে অন্ধকারে ও সমাজকে বিভাজনে নিমজ্জিত করে।

নৈতিকতার ভারসাম্য

নবী করিম (সা.) এই হাদীসে এমন এক নৈতিক কাঠামো উপস্থাপন করেছেন,
যেখানে ঈমান ও মানবসম্পর্ক পরস্পর পরিপূরক— একটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, অন্যটি মানুষের প্রতি দায়িত্ব।

যে ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে, সে আসলে আল্লাহর সেই সৃষ্টিশীল রহমতকেই অস্বীকার করে, যা মানুষে মানুষে সংযোগ সৃষ্টি করেছে।

উপসংহার

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই হাদীস কেবল নৈতিকতার শিক্ষা নয়— এটি মানবজীবনের একটি নীতি-ঘোষণা। ঈমান, সম্পর্ক ও ন্যায়—এই তিনটি হলো ইসলামী জীবনের তিন স্তম্ভ। আর শিরক, সম্পর্কচ্ছেদ ও অন্যায়ের সমর্থন—এগুলো সেই স্তম্ভ ভাঙার তিনটি হাতিয়ার। যে ব্যক্তি এই পার্থক্য বুঝে, সে-ই প্রকৃত মুমিন— যার ঈমান আল্লাহর সঙ্গে, যার হৃদয় আত্মীয়তায় উজ্জ্বল, আর যার কণ্ঠ ন্যায়ের ডাক বহন করে।

 পাদটীকা :

১.আল-কাফি, শায়খ আল-কুলাইনি, খণ্ড ২,(ঈমান ও কুফর অধ্যায়), হাদীস নং ২৩। (রেফারেন্স: দারুল কুতুব আল ইসলামী ,তেহরান সংস্করণ)

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button