অহংকারী পশ্চিম: আধুনিক বিশ্বের জঙ্গলের আইনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৩রা নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা যে নৈতিক ও মানবিক সংকটে নিমজ্জিত, তার মূল কারণ একটিই—ইস্তেকবার, অর্থাৎ অহংকার, আধিপত্য ও আত্মম্ভরিতার রাজনীতি। আজকের পশ্চিমা সভ্যতা এই ইস্তেকবারের সবচেয়ে প্রকট ও বিপজ্জনক রূপ। শক্তি, সম্পদ ও প্রভাবের দম্ভে তারা পৃথিবীকে এমন এক বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে, যেখানে ন্যায় ও বিবেকের পরিবর্তে চলছে “জঙ্গলের আইন”—যার শিকার সমগ্র মানবজাতি।
“ইস্তেকবার” — ধারণা ও বাস্তবতা
“ইস্তেকবার” শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো নিজেকে বড় ভাবা বা অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করা।
নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব আসে বিনয়, জ্ঞান ও ন্যায়ের মাধ্যমে। কিন্তু অসুস্থ সমাজব্যবস্থায় এই ধারণা বিকৃত হয়ে দাঁড়ায়—অন্য জাতির ওপর আধিপত্য, উপনিবেশ ও শোষণের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা।
এই বিকৃত মানসিকতাই আজকের তথাকথিত সভ্য পশ্চিমের “উন্নত বিশ্বের” মুখোশের আড়ালে লুকানো ভয়াবহ বাস্তবতা।
এর ফলেই গড়ে উঠেছে আধুনিক দাসত্বের এক বৈশ্বিক কাঠামো, যেখানে দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালীদের ইচ্ছার দাসে পরিণত হয়েছে।
আত্মসমর্পণ না প্রতিরোধ — জাতির দুই পথ
এই পরিস্থিতিতে কোনো জাতির সামনে দুইটি পথই খোলা থাকে—
১️. অপমান ও পরাধীনতা মেনে নেওয়া, অথবা
২️. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
প্রতিরোধের পথ বেছে নিতে হলে তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ আবশ্যক—
- প্রথমত: ইস্তেকবারের প্রকৃতি ও কৌশল গভীরভাবে বোঝা।
- দ্বিতীয়ত: প্রতিরোধের নৈতিক ও আদর্শিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা।
- তৃতীয়ত: সমাজকে শিক্ষিত করা—যাতে তারা বুঝতে পারে, অন্যায়ের কাছে নত হওয়া মানে নিজের স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে বিসর্জন দেওয়া।
মসজিদ: প্রতিরোধের আধ্যাত্মিক ঘাঁটি
জনসচেতনতা গড়ে তোলার সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদ—যেখানে মানুষ আল্লাহর সামনে সেজদায় নত হয়ে ঘোষণা করে,
“الله اکبر من أن یوصف” — আল্লাহ সকল অহংকারী শক্তির চেয়ে মহান এবং বর্ণনার অতীত।
এই ঈমান ও তাওহিদই মানুষের ভেতরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহস জোগায়।
যে জাতি ঈমান ও চেতনার ওপর দাঁড়িয়ে সবধরনের জুলুম ও উপনিবেশবাদ প্রত্যাখ্যান করে,
সেই জাতিই মানবতার প্রকৃত রোল মডেল।
ইরানের ইসলামি বিপ্লব — ইস্তেকবারবিরোধী চেতনার দৃষ্টান্ত
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
ইরানি জাতি সেদিন ঘোষণা করেছিল— “না পূর্ব, না পশ্চিম; আমরা শুধু আল্লাহর পথে।”
এই বিপ্লব ছিল কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়; এটি ছিল আধ্যাত্মিক মুক্তির আহ্বান।
আজও, বিশ্বমাধ্যমের নীরবতা সত্ত্বেও, ইরানি বিপ্লবের চেতনা—ইস্তেকবারবিরোধিতা—
বহু জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে মানুষ বুঝে গেছে—শক্তিই সত্য নয়; সত্যই সর্বশক্তিমান।
ইস্তেকবারবিরোধিতা — তাওহিদের অন্তর্নিহিত সত্য
ইস্তেকবারবিরোধিতা কেবল রাজনৈতিক অবস্থান নয়, এটি তাওহিদের প্রতিফলন। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে বিবেকবান, আল্লাহকেন্দ্রিক, জ্ঞানসম্পন্ন ও স্বাধীনচেতা, সে কখনোই অহংকারী শক্তির আধিপত্য মেনে নিতে পারে না।
অন্যদিকে, যারা তা মেনে নেয়, তাদের বিবেক, বোধ বা আত্মমর্যাদায় গভীর ঘাটতি রয়েছে। এই কারণেই ইসলামি সমাজে আলেম, মসজিদ, মাদরাসা ও ধর্মীয় সংগঠন— মানুষকে প্রকৃত “ইস্তেকবার” চেনানোর কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারে।
আধুনিক যুগের ইস্তেকবার — পশ্চিম, আমেরিকা ও জায়নবাদ
আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতি অনুধাবন করেছে যে, আধুনিক ইস্তেকবারের প্রতীক হলো পশ্চিমা শক্তিগুলো—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ইসরায়েলি জায়নবাদ।
তাদের আদর্শ ভয়াবহ, তাদের নীতি অমানবিক, এবং তাদের কার্যকলাপ মানবতার মুখে কলঙ্ক। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং এটি এক মানবিক, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্ব— যার প্রমাণের জন্য কোনো যুক্তিই আর প্রয়োজন নেই।
পশ্চিমা সভ্যতার মুখোশের আড়ালে আজ যে বাস্তবতা উন্মোচিত হচ্ছে, তা হলো জঙ্গলের আইন—যেখানে শক্তিই সত্য, দুর্বলদের কোনো অধিকার নেই।
কিন্তু ইসলামি চেতনা আহ্বান জানায় এক বিকল্প বিশ্বে— যেখানে ন্যায়, করুণা ও তাওহিদ মানবতার প্রকৃত ভিত্তি। “যে জাতি ঈমান, তাওহিদ ও স্বাধীনতার ওপর দাঁড়িয়ে ইস্তেকবারকে প্রত্যাখ্যান করে— সেই জাতিই প্রকৃত অর্থে শ্রেষ্ঠ জাতি।”



