“আমি সেই নবীর কন্যা”— হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর বাগে ফাদাকের খুতবার অন্তর্নিহিত নির্দেশ
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৩রা নভেম্বর, ২০২৫

“আমি সেই নবীর কন্যা”— হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর বাগে ফাদাকের খুতবার অন্তর্নিহিত নির্দেশ | হযরত ফাতিমা ((সা.আ.)-এর খুতবায়ে ফাদাক সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদী (রহ.)-এর বিশ্লেষণ
মিডিয়া মিহির: হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) ছিলেন তাঁর পিতা—প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্যিকার উত্তরসূরি ও মিশনের ধারক। তিনি মানবতার দুঃখে কাতর, পথভ্রষ্টতার যন্ত্রণায় উদ্বিগ্ন, এবং সমাজকে সত্যপথে ফিরিয়ে আনতে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর বক্তব্য ও প্রতিবাদ ছিল ভালোবাসার ভাষা— অভিযোগ নয়, বরং এক মাতৃত্বসুলভ আহ্বান: “জেগে ওঠো, সত্যের পথে ফিরে চলো।”
খুতবায়ে ফাদাকের অন্তর্নিহিত প্রেরণা
আইয়্যামে ফাতিমা (ফাতিমিয়া দিবস) উপলক্ষে মরহুম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদী (রহ.) তাঁর আলোচনায় বলেন—
হযরত ফাতিমা (সা.আ.) -এর খুতবা ফাদাকের প্রকৃত উদ্দেশ্য আজও অনেকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের কাছেও তাঁর বক্তব্যের গভীরতা অনেক সময় অধরা থেকে গেছে।
তাঁর বক্তৃতার লক্ষ্য ছিল সেই একই, যা নবী করিম (সা.)-এর নবুওয়তী দায়িত্বের কেন্দ্রবিন্দু— মানবজাতিকে জ্ঞানের আলো ও সত্যের পথে ফিরিয়ে আনা।
নবী করিম (সা.)-এর মতোই দয়ার সাগর
যেভাবে নবী করিম (সা.) মানুষের বিপথগামিতায় ব্যথিত হতেন, যেভাবে তিনি কষ্ট পেতেন এই ভেবে— মানুষ কেন হেদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে, কেন প্রকৃত সুখের সন্ধান হারাচ্ছে— হযরত ফাতিমা (সা.)-এর হৃদয়ে সেই একই দুঃখ ও মমতার স্রোত প্রবাহিত ছিল।
তিনি মানুষকে পথ দেখাতে চেয়েছেন, যেন তারা অন্ধকার থেকে আলোয় আসে, অবিচার ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে ঈমান ও ন্যায়ের পথে ফিরে যায়।
“আমি সেই নবীর কন্যা”— এক আত্মিক ঘোষণা
খুতবায়ে ফাদাকের শুরুতেই হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বলেন— “আমি সেই নবীর কন্যা।”
এই ঘোষণাটি ছিল তাঁর বক্তব্যের কেন্দ্রীয় বার্তা। তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন— তাঁর বক্তব্য কোনো ব্যক্তিগত অভিমান বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়; বরং নবুওয়তের ভালোবাসা, মমতা ও দয়ার ধারাবাহিকতা।
তিনি যেন বলছেন, “আমি সেই নবীর কন্যা, যিনি মানবতার জন্য কেঁদেছেন; আমার কথাও সেই দয়ারই প্রতিধ্বনি।”
কুরআনের আয়াতে প্রতিফলিত দয়ার বাণী
বক্তৃতার শুরুতেই তিনি যে আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, তা নবী করিম (সা.)-এর গুণাবলি প্রকাশ করে—
لَقَدْ جَاءَکُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِکُمْ عَزِیزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیصٌ عَلَیْکُم بِالْمُؤْمِنِینَ رَؤُوفٌ رَّحِیمٌ
“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের কাছে এক রাসূল আগমন করেছেন; তোমাদের কষ্ট তাঁকে কষ্ট দেয়, তিনি তোমাদের কল্যাণে আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময়।” (সূরা আত-তাওবা: ১২৮)
এই আয়াত পাঠ করে তিনি যেন জানিয়ে দিচ্ছেন— নবী করিম (সা.)-এর যে ভালোবাসা ও মমতা ছিল, তারই প্রতিফলন তাঁর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
সত্য, ন্যায় ও মুক্তির আহ্বান
হযরত ফাতিমা (সা.)-এর বক্তৃতার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই— মানুষকে জাগানো, তাদের হৃদয়ে ঈমানের আলো প্রজ্বলিত করা এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত মুক্তির পথে পরিচালিত করা। তাঁর কথা ছিল আল্লাহর বানীর প্রতিধ্বনি, নবুওয়তের ধারাবাহিকতা, এবং মানবতার মুক্তির চূড়ান্ত আহ্বান।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) শুধু এক নবীর কন্যা নন, তিনি নবুওয়তের কণ্ঠের ধারাবাহিকতা— যার আহ্বানে ভালোবাসা, যার প্রতিবাদে ন্যায়, আর যার নীরবতায়ও এক চিরন্তন বার্তা লুকিয়ে আছে— “আমি সেই নবীর কন্যা, যিনি তোমাদের জন্য কেঁদেছিলেন।”



