জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

স্বামীকে আকৃষ্ট করার জাদুর বিপদ: নবী ﷺ ও ইমাম আলী (আ.)-এর সতর্কতা

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আজকের যুগে মানুষ আবারো ফলজ্যোতিষ, তাবিজ, মন্ত্র ও অজানা শক্তির দিকে ঝুঁকছে। সম্পর্ক ও পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য তারা প্রায়ই আল্লাহ ও বুদ্ধির ওপর ভরসা না করে জাদু বা শয়তানিক কৌশলে আশ্রয় নেয়। ইসলাম স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয়, যে কোনো উদ্দেশ্য—যতই ভালো বা প্রেমময় হোক—যদি আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়, তার ফল ধ্বংস। নবী ﷺ ও ইমাম আলী (আ.) এই বিষয়ে আমাদের সতর্ক করেছেন।

এক নারী নবী করিম ﷺ-এর কাছে এসে বলল,হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার প্রতি কঠোর আচরণ করে। আমি একটি কাজ জাদু /তাবিজ করেছি যাতে তিনি আমার প্রতি আকৃষ্ট হন। আজকের যুগেও দেখা যাচ্ছে, মানুষ আবার ফলজ্যোতিষ, তাবিজ, মন্ত্র, অজানা শক্তি ও জাদু-র দিকে ঝুঁকছে, যেখানে এসবের নাম সুরেলা ও প্রলোভনমূলক হয়। অনেকেই জীবনের আবেগিক, পারিবারিক বা আর্থিক সমস্যার সমাধানে আল্লাহর ওপর ভরসা না করে এই ধরনের জাদু বা কুহিনীতার আশ্রয় নেয়। তারা সচেতন নয় যে, এই সমস্ত কাজের মূল শিকড় কুফর ও শিরকে নিহিত।

কুরআন মাজিদে নবী সুলায়মান (আ.)-এর গল্পে উল্লেখ আছে, জাদু শয়তানীদের শিক্ষা; আল্লাহ কাউকেই এমন জ্ঞান দেননি। জাদু কখনো বাহ্যিকভাবে ছোটোখাটো চাওয়ার জন্য ব্যবহারযোগ্য মনে হতে পারে, যেমন “ভালোবাসা জাগানো” বা “সমস্যা সমাধান”।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি এক অন্ধকার— যা মানুষের আত্মাকে ঈমান ও তাওয়াক্কুল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যে ব্যক্তি জাদুর আশ্রয় নেয়, সে আসলে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব) থেকে বিচ্যুত হয়, কারণ সে আল্লাহর বদলে গোপন ও ব্যর্থ শক্তির সাহায্য চায়। এই ধাপে ধাপে বিচ্যুতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়,যেখানে মানুষ নিজেই বুঝতে পারে না, তার হৃদয় কীভাবে আল্লাহর স্মৃতি থেকে খালি হয়ে গেছে।

 ইমাম আলী (আ.)-এর সতর্কবাণী

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

مَن تَعَلَّمَ شَیئاً مِنَ السِّحرِ قَلیلاً أو کَثیراً فَقَد کَفَرَ، و کانَ آخِرَ عَهدِهِ بِرَبِّهِ، و حَدُّهُ أن یُقتَلَ إلاّ أن یَتُوبَ
যে ব্যক্তি সামান্য বা বেশি কিছু জাদু শেখে, সে কুফরীর পথে প্রবেশ করেছে এবং তার প্রভুর সঙ্গে চুক্তি ভেঙে দিয়েছে; তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, যদি না সে তাওবা করে।

এই বাণী আমাদের শেখায়, জাদু কেবল একটি সাধারণ পাপ নয়; এটি আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শয়তানের রাজ্যে প্রবেশের পথ।

 নবী -এর প্রতিক্রিয়া: এক নারী নবী করিম ﷺ-এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার প্রতি কঠোর আচরণ করছে। আমি একটি তাবিজ/জাদু করেছি যেন সে আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়। নবী করিম ﷺ তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন: হায় তোমার সর্বনাশ! তুমি তোমার দ্বীনকে কলুষিত করেছ! আল্লাহর উত্তম ফেরেশতাদের লা‘নত তোমার উপর! আসমানের ফেরেশতাদের লা‘নত তোমার উপর! জমিনের ফেরেশতাদের লা‘নত তোমার উপর!(আল-নাওয়াদির, রাওয়ান্দি, পৃষ্ঠা ২৫)

 শিক্ষণীয় বার্তা

নবী ﷺ-এর এই প্রতিক্রিয়া কেবল আবেগের প্রকাশ নয়; এটি চিরন্তন সত্যের ঘোষণা। যদি মানুষের উদ্দেশ্য যতই ভালো মনে হোক— যেমন “ভালোবাসা জাগানো” বা “সম্পর্ক ঠিক করা”— তবে যখন সে অবৈধ ও আল্লাহ-বিরুদ্ধ পথ গ্রহণ করে, তার ফল ধ্বংস। ভালোবাসার জাদু”, “মন্ত্রমুগ্ধ দোয়া” বা “তাবিজ”—
এসব আসলে এক জিনিসেরই নাম: আত্মাকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নির্ভরশীল করা। আজকের সমস্যার মূল— অনেকে আল্লাহর নির্দেশ ও সঠিক উপায় বিশ্বাস করতে চায় না।

সমাধানের পথ

ইসলাম সম্পর্কের সঠিক সমাধান দেখিয়েছে:

১.নৈতিক আচরণ,

২.ধৈর্য,

৩.আহলে বায়েতের দোয়া ও আমল,

৪.একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা।

যে ব্যক্তি এসব ছেড়ে জাদুর আশ্রয় নেয়, সে আল্লাহর হিকমতপূর্ণ ব্যবস্থার বাইরে চলে যায়।

সারসংক্ষেপ: কোনো দুনিয়াবি চাওয়া, যতই আবেগময় বা শান্তিদায়ক হোক না কেন, কখনোই সে যথেষ্ট নয় যে মানুষ শয়তানের পথে হেঁটে নিজের ধর্ম ও অন্তর নষ্ট করুক। জাদু বাহ্যিকভাবে প্রলোভনমূলক, কিন্তু অন্তরে ঈমানকে পোড়ায়।
মুক্তি কেবল সম্ভব— তাওবা, তাওহীদে প্রত্যাবর্তন এবং আল্লাহর শক্তির ওপর পুনরায় ভরসা স্থাপন। বাহ্যিকভাবে প্রলোভনমূলক, কিন্তু অন্তরে ঈমানকে পোড়ায়। এর থেকে মুক্তি কেবল সম্ভব—

১.তাওবা,

২.তাওহীদ ও আল্লাহর একত্বে প্রত্যাবর্তন,

৩.আল্লাহর শক্তির ওপর পুনরায় ভরসা স্থাপন।

নবী ﷺ-এর প্রতিক্রিয়া আমাদের শিখায়—দুনিয়ার কোনো সমস্যাই আমাদের ধর্ম ও অন্তরের পবিত্রতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button