ইরানের অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতবাক ইসরায়েল: সাবেক মার্কিন কর্নেল
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: সাবেক মার্কিন কর্নেল লরেন্স উইলকারসন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ইরান–ইসরায়েল সংঘাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে হতবাক হয়ে পড়ে। তার ভাষায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এতটাই উন্নত এবং কার্যকর ছিল যে Patriot, Iron Dome বা THAAD-এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সেগুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়।
উইলকারসন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসরায়েল এমন এক প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছে, যার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা শুধু উন্নত নয়, কৌশলগতভাবেও অসাধারণ। এই হামলাগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে পুরোপুরি উন্মোচিত করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম ছিল এবং তাদের প্রতিরক্ষা-বিধ্বংসী ক্ষমতা (anti-interception capability) যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্রদের জন্যও এক নতুন সতর্কবার্তা।”
১২ দিনের ইরান–ইসরায়েল সংঘাত
২০২৫ সালের ১২ জুন ইসরায়েল প্রথমবারের মতো ইরানের অভ্যন্তরে বৃহৎ পরিসরের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি ও পূর্ণমাত্রার সংঘাতের সূচনা।
এর পরদিন রাতেই, ১৩ জুন, ইরান ব্যাপক প্রতিশোধমূলক আঘাত হানে। ইরানি বাহিনী একাধিক ধাপে শতাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করে, যার একটি বড় অংশ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে মূল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
সামরিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ইরানের ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উচ্চগতিসম্পন্ন এবং “মাল্টি-ফেজ ম্যানুভারিং সিস্টেম”-যুক্ত হওয়ায় প্রচলিত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি দিয়ে সেগুলো থামানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ, ইসরায়েলে আতঙ্ক
ইসরায়েল দাবি করেছিল যে তাদের Iron Dome এবং Arrow-3 প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হয়। তবে ভিডিওচিত্র ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার বিশ্লেষণ বলছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি বড় অংশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে সরাসরি সামরিক ঘাঁটি, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও যোগাযোগ অবকাঠামোয় আঘাত হানে।
ইরানের পাল্টা হামলার পর তেলআবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। ইসরায়েলি সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়।
যুদ্ধবিরতির আবেদন
ধারাবাহিক ১২ দিনের সংঘর্ষের পর উভয় পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। ইরানের সামরিক মুখপাত্র দাবি করেন, তাদের হামলা “আগ্রাসনের জবাবে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ” ছিল। অন্যদিকে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানায়।
সাবেক কর্নেল উইলকারসনের মতে, “এই সংঘাত দেখিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য এখন আগের মতো নেই। ইরান প্রযুক্তি ও কৌশলে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।”
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই যুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘাত নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির নতুন ভারসাম্য ও প্রতিরক্ষা কৌশলের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। ইরানের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।



