সালাফিবাদ: ঐক্যের মুখোশে বিভাজনের দর্শন
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলামের ইতিহাসে বহু মতবাদ এসেছে, গেছে—কিন্তু কিছু প্রবাহ এমন রয়েছে, যা ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে নিজেদের ব্যতিক্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সালাফিবাদ তেমনই এক আত্মঘোষিত ধর্মীয় প্রবাহ, যা ঐক্যের কথা বললেও বাস্তবে মুসলিম সমাজে বিভাজনের বীজ বপন করে।
আত্মঘোষিত উত্তরাধিকার
সালাফিবাদ নিজেকে সালাফে সালেহিন—অর্থাৎ সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনের উত্তরসূরি বলে দাবি করে। কিন্তু এই দাবির পেছনে রয়েছে একটি মৌলিক অসঙ্গতি: তারা ইসলামের ঐতিহ্যগত মাজহাবব্যবস্থাকে অস্বীকার করে, অথচ সেই মাজহাবগুলোর মাধ্যমেই সালাফদের চিন্তা ও ফিকহ আমাদের কাছে পৌঁছেছে।
মাজহাববিহীন ইসলাম: আদর্শ না বিভ্রান্তি?
এই প্রবাহের মূল ভিত্তি ওহাবি মতবাদ যা বলে—ইসলামে কোনো মাজহাবের প্রয়োজন নেই। তাদের মতে, মুসলমানদের উচিত সরাসরি কুরআন ও হাদিসে ফিরে যাওয়া, সালাফ যুগের অনুসরণ করা। কিন্তু তারা ভুলে যায়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আলেমরা যে ফিকহ, তাফসির, উসুল ও ক্বাওয়ায়েদ গড়ে তুলেছেন, তা কেবল সময়ের প্রয়োজন নয়, বরং ইসলামের গভীরতা ও বহুমাত্রিকতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
ঐতিহ্য বনাম সংকীর্ণতা
সালাফিবাদ ইসলামের ঐতিহ্যগত পাণ্ডিত্যপূর্ণ উত্তরাধিকারকে অস্বীকার করে এমন এক পথের আহ্বান জানায়, যা ধর্মীয় ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, সংকীর্ণতা ও একরৈখিক চিন্তার জন্ম দেয়। তারা নিজেদের ছাড়া অন্যদের ইসলাম বহির্ভূত বলে গণ্য করে, যা মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
একটি প্রশ্ন, একটি চেতনা
এই মতবাদ আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: ইসলাম কি শুধুই অতীতের পুনরাবৃত্তি, নাকি একটি জীবন্ত, বিকাশমান চিন্তা-প্রবাহ? সালাফিবাদ যদি ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে, তবে তা ইসলামের মূল চেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
সূত্র:
১. সাঈদ রমজান আল-বুতি, সালাফিয়্যাহ: মাজহাব না বিদআত, পৃষ্ঠা ২৫।
২. একই বই, অধ্যায় ৯–১২; যেখানে সালাফিবাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা রয়েছে।



