কিয়ামত এসব হিসাব চেনে —এক আলোকিত আলেমের সততার গল্প
মিডিয়া মিহির: আধুনিক যুগে যখন অনেকেই ছোটখাটো অন্যায়কে তুচ্ছ মনে করেন, তখন এক আলোকিত আলেমের জীবনের এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষের হক বা অধিকার কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুই একটি স্মৃতি নয়, বরং এক জীবন্ত শিক্ষা—যেখানে পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় একজন মানুষকে কতটা সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
ঘটনাটি এমন
আয়াতুল্লাহ জাভীদানের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রখ্যাত আলেম মরহুম শায়খ মুর্তজা জাহেদ জীবনের শেষ দিকে এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, নিজে চলাফেরা করতে পারতেন না। সে সময় আধুনিক যানবাহনের অভাব থাকায়, কেউ একজন তাঁকে কাঁধে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন। যেহেতু তাঁর শরীর তখন খুবই হালকা ও দুর্বল ছিল, তাই এতে বহনকারী ব্যক্তির তেমন কষ্ট হতো না।
একদিন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে ‘কুচে-ই শুতরদারান’ নামক একটি গলিতে পৌঁছে বহনকারী ব্যক্তি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শায়খকে সাময়িকভাবে একটি কাঁচা মাটির বাড়ির পাশেই নামিয়ে দেন। তখন শায়খের শরীর বাড়ির কাঁচা দেয়ালে হালকাভাবে ঠেকে যায়, আর তাতে কিছুটা মাটি ও খড়কুটো নিচে পড়ে যায়।
এই সামান্য ঘটনাতেই শায়খ মুর্তজা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন। বাড়ির মালিক দরজা খুললে, শায়খ নিজেই বলেন— “আমি আপনার বাড়ির দেয়ালে হেলান দিয়েছিলাম, এতে কিছু কাদা ও খড় পড়ে গেছে। বলুন, এর ক্ষতিপূরণ কত দিতে হবে?”
বাড়ির মালিক, যিনি শায়খকে শ্রদ্ধা করতেন, বিনয়ের সঙ্গে বলেন— “আপনার কোনো দায় নেই, এই বাড়ি তো আপনারই।”
কিন্তু শায়খের জবাব ছিল আরও গভীর ও চিন্তনীয়: “কিয়ামতের দিন এসব কথা ধরা হবে না। হয় আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, নয়তো ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করুন।
এই ঘটনা শুধু একজন আলেমের সততার নিদর্শন নয়, বরং আমাদের সকলের জন্য একটি আয়না—যেখানে আমরা নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করতে পারি: আমরা কি অন্যের হক আদায়ে এতটাই সচেতন?
সূত্র: সিরে ও খাতেরাতে ওলামা, পৃষ্ঠা ৪৮।



