কেয়ামতের দিনে সত্যিকারের ভয়—শুধু পাপের
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: কেয়ামতের দিন মানুষের কাছে কোনো ধন-সম্পদ, ক্ষমতা বা সম্পর্ক মূল্য রাখবে না—সেদিন শুধু গ্রহণযোগ্য হবে সেই হৃদয়, যা আল্লাহর প্রেমে পবিত্র ছিল। আর যে বিষয়টি মানুষকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, সেটিই প্রকৃত ভয়ের যোগ্য—পাপ।
আমিরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগা-তে আমাদের এভাবে উপদেশ দেন:
«وَلَا یَخَافَنَّ إِلَّا ذَنْبَهُ»
মানুষ যেন শুধু নিজের পাপকেই ভয় করে।
ব্যাখ্যা
মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের একমাত্র নির্ভরতা আল্লাহ তাআলা। সুতরাং যে বিষয়টি মানুষকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, কেবল সেই বিষয়টিই ভয়ের উপযুক্ত—আর সেটি হল গুনাহ (পাপ)।
ধরা যাক কেউ যদি জাহান্নামের আগুনেও থাকে, তবু প্রকৃত শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। যেমন ইমাম আলী (আ.) তাঁর এক মুনাজাতে আরজ করেন:
«رَبِّ صَبَرْتُ عَلَىٰ عَذَابِكَ فَكَيْفَ أَصْبِرُ عَلى فِرَاقِكَ»
হে প্রভু! যদি আপনার শাস্তি সহ্য করতেও পারি, তবে আপনার বিচ্ছেদ কীভাবে সহ্য করবো?
আল্লাহ বলেন, সেদিন হবে যখন মানুষের একমাত্র পুঁজি হবে সেই নির্মল হৃদয়, যা গুনাহের কালিমা থেকে মুক্ত।
গুনাহের পরিণতি
ইমাম বাকির (আ.) এ প্রসঙ্গে বলেন:
مَا شَیْءٌ أَفْسَدَ لِلْقَلْبِ مِنَ اَلْخَطِیئَةِ إِنَّ اَلْقَلْبَ لَیُوَاقِعُ اَلْخَطِیئَةَ فَمَا تَزَالُ بِهِ حَتَّی تَغْلِبَ عَلَیْهِ
গোনাহর মতো হৃদয়কে এতটা ধ্বংসকারী আর কিছুই নেই। গুনাহ যখন হৃদয়ে প্রবেশ করে, ক্রমে তা শক্তি কেড়ে নিয়ে একসময় সম্পূর্ণভাবে উলটে ফেলে।
এমন উল্টে যাওয়া হৃদয়—যা আল্লাহর সুগন্ধ হারিয়ে গুনাহের গন্ধে কলুষিত—আখেরাতে আর কোনো মূল্য রাখবে না।
প্রকৃত মুমিন কেন ভয় পায় না?
যে আল্লাহর পথে আছে, সে দুশমনকে ভয় করে না—কারণ তার শক্তি আল্লাহ। দুনিয়ার কষ্ট-দুর্দশাও তাকে কাঁপাতে পারে না—কারণ সে জানে, যা আসে, আসে প্রিয়জনের কাছ থেকেই।
তার একমাত্র ভয় হলো—কোথাও যেন আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে!
সুতরাং আমিরুল মুমিনীন (আ.) যেমন বলেছেন—
ভয় করতেই হলে—নিজের পাপকেই ভয় করো, এর বাইরে কিছু নয়।
সূত্র:
১. হিকমত, ৮২।
২. দোয়া কুমেইল।
৩. “যে দিনে ধন-সম্পদ ও সন্তান কোনো লাভ দিতে পারবে না, সেই দিনে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি উপকার পাবে, যে পবিত্র ও সৎ হৃদয় নিয়ে আল্লাহর নিকট আসে।”
— (শে‘রায়ে, ৮৮-৮৯)
৪. আমালি শেইখ সাদুক, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৯৭।



