যদি মা সন্তানকে দুধ না পান করান, তাহলে কি মা অপরাধী ?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: যে মা অসুস্থতা বা শারীরিক দুর্বলতার কারণে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে অক্ষম, তিনি কোনোভাবেই সন্তানের প্রতি অন্যায়কারী নন। ইসলাম ও মানবিক বিবেচনায় এটি এক প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা— দোষ নয়। বরং, চিকিৎসকের পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা মা ও সন্তানের উভয়ের অধিকারেরই সম্মানজনক প্রতিফলন।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাইয়্যেদ আলিরেজা, পারিবারিক নৈতিকতা ও ধর্মীয় জীবনের এক বিশিষ্ট বক্তা, এক আলোচনায় “অসুস্থতা বা শারীরিক দুর্বলতার কারণে মায়ের দুধ না খাওয়ানো” বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
প্রশ্ন :আমি অসুস্থতা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে আমার ছেলেকে উনিশ মাস বয়সে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করেছি। কিন্তু আমার স্বামী বলেন, “যে মা সন্তানের যথেষ্ট দুধ দেয় না, সে সন্তানের প্রতি অন্যায় করছে।” আমি কি সত্যিই দোষী?
উত্তর:প্রথমেই বুঝতে হবে — এখানে ব্যক্তিগত বিচার নয়, বরং একটি সাধারণ নীতির ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক নিয়মেরই কিছু ব্যতিক্রম থাকে। যেমন, ইসলাম বলে — যে মা সুস্থ ও সক্ষম, অথচ ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলায় সন্তানকে দুধ দেয় না, সে সন্তানের প্রতি অন্যায় করে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু মা আছেন যারা যথেষ্ট দুধ থাকা সত্ত্বেও শরীরের আকৃতি নষ্ট হওয়ার ভয় বা সামাজিক ধারণার কারণে সন্তানকে বুকের দুধ না দিয়ে ফর্মুলা দুধ খাওয়ান। এটি নিঃসন্দেহে সন্তানের স্বাভাবিক অধিকারের প্রতি অবিচার। কিন্তু যখন কোনো মা অসুস্থতা বা দুর্বলতার কারণে দুধ খাওয়াতে পারেন না, তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এক্ষেত্রে তাকে দোষী বলা যায় না— কারণ এটি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি শারীরিক সীমাবদ্ধতা, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। এই অবস্থায় দুধ ছাড়ানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া উচিত, যাতে মায়ের স্বাস্থ্য ও সন্তানের অধিকার উভয়ই সুরক্ষিত থাকে।
ধর্মীয় ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি
আল্লাহ তাআলা মায়ের শরীরে সন্তানের জন্য দুধকে এক বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে স্থাপন করেছেন। যদি মা সক্ষম হন, তবে সেই অধিকার পূরণ করা তার দায়িত্ব। কিন্তু অসুস্থতা, দুর্বলতা বা চিকিৎসাগত সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটি দোষ নয়, বরং একটি ব্যতিক্রম— যা ইসলামের দৃষ্টিতেও সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য।
পারিবারিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন
পিতারও উচিত এই বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বোঝা। অসুস্থ মাকে দোষ দেওয়া নয়, বরং তাকে সহায়তা করা পরিবারের দায়িত্ব। যেমন, কেউ অসুস্থ হলে রান্না করতে না পারলেও তাকে দোষ দেওয়া যায় না— তেমনি অসুস্থ মায়ের দুধ না খাওয়ানোও কোনো অন্যায় নয়।
উপসংহার
অতএব, অসুস্থতা বা শারীরিক দুর্বলতার কারণে মায়ের দুধ না খাওয়ানো কখনোই অন্যায় নয়। এটি কোনো অবহেলা নয়, বরং এক অনিবার্য বাস্তবতা— যা মায়ের মানবিক সীমাবদ্ধতা ও চিকিৎসাগত পরিস্থিতির ফলাফল। ইসলাম এমন মায়ের প্রতি সহানুভূতি ও বোঝাপড়ার আহ্বান জানায়, দোষারোপের নয়।



