ক্রমাগত ধমক শিশুর মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
উম্মে যাহরা আহমেদ | প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ক্রমাগত ধমক শিশুর মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর: বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা! ছোট ভুলের জন্যও ধমক দেওয়ার পরিবর্তে ধৈর্য ধরে বোঝানোই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
মিডিয়া মিহির: শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, শেখার ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস রক্ষায় পরিবারে শান্তিপূর্ণ এবং সহানুভূতিশীল পরিবেশ অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ক্রমাগত ধমক বা অতিরিক্ত শাসন শিশুর মস্তিষ্কে “টক্সিক স্ট্রেস” তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে আচরণ, মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবার ও পরিবেশের ভূমিকা
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ও শেখার ক্ষমতায় পরিবার ও আশেপাশের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট ভুলের জন্যও ধমক দেওয়ার পরিবর্তে ধৈর্য ধরে বোঝানোই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
অতিরিক্ত ধমকের নেতিবাচক প্রভাব
- টক্সিক স্ট্রেস: নিয়মিত ধমক শিশুর মস্তিষ্কে টক্সিক স্ট্রেস তৈরি করে। এর ফলে মনোযোগ নষ্ট হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং শেখার আগ্রহ কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবে যাদের ওপর অতিরিক্ত শাসন করা হয়েছে, বড় হয়ে তাদের মধ্যে মনোযোগ ঘাটতি ও স্মৃতিসংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়।
- ভয় ও উদ্বেগ: বারবার ধমক খাওয়া শিশুদের মধ্যে ভয়, অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগের প্রবণতা বেড়ে যায়। তারা নিজের মতামত প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে। শিশু মনোবিজ্ঞানী ম্যারি পিয়ারসন বলেন, “ধমক শিশুর নিরাপত্তাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত করে। বারবার শাসনের ফলে শিশুর আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় এবং তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে ওঠে।”
- আক্রমণাত্মক আচরণ: দীর্ঘদিন শাসন ও ধমকের মধ্যে থাকা শিশুরা রাগী, জেদি বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। গবেষণা বলছে, অহেতুক শাসন তাদের সহমর্মিতা ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত করে। স্কুল পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, এমন শিশুরা সহপাঠীদের সঙ্গে ঝগড়াটে আচরণ করে এবং সহজেই রাগ দেখায়।
সঠিক শিক্ষণ ও শাসন পদ্ধতি
- যৌক্তিক শাস্তি ও বোঝানো: শিশু যখন ভুল করে, তখন শাস্তির পরিবর্তে যুক্তি দিয়ে বোঝানো ও শুধরে দেওয়া শ্রেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিশু খেলায় অন্যের জিনিস নষ্ট করে, তবে তাকে বোঝাতে হবে কেন এটি ভুল এবং কীভাবে পরিস্থিতি ঠিক করা যায়।
- ইতিবাচক পারিবারিক পরিবেশ: শিশুর সামনে শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক আচরণ প্রদর্শন করা দরকার। ড. লারা হ্যান্ডসন, শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ, বলেন, “শিশুর শেখার জন্য ভয় নয়, উৎসাহ ও প্রশংসা সবচেয়ে কার্যকর। ইতিবাচক পরিবেশ তাদের সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়।”
- স্পষ্ট নিয়ম ও রুটিন: শিশুর জন্য পরিষ্কার নিয়ম এবং নির্দিষ্ট দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করা জরুরি। পড়াশোনা, খেলাধুলা ও বিশ্রামের সময় ঠিক রাখা তাদের মনোযোগ, স্মৃতি এবং শৃঙ্খলা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত পরামর্শ
- শিশুদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সময় ধৈর্য সহকারে বোঝান, ভয় দেখাবেন না।
- পরিবারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ বজায় রাখুন।
- স্পষ্ট নিয়ম এবং নিয়মিত রুটিন তৈরি করে শিশুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে সাহায্য করুন।
- শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সৃজনশীলতা বাড়াতে প্রশংসা ও উৎসাহ দিন।
বিশেষজ্ঞরা একমত যে, শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, শেখার ক্ষমতা ও আচরণ বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার এবং পরিবেশের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই ছোট ভুলের জন্য বারবার ধমক না দিয়ে ইতিবাচক শিক্ষণ ও উৎসাহমূলক পরিবেশ তৈরি করাই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।



