মেয়ের নামাজ ও হিজাব নিয়ে দুশ্চিন্তা: করণীয় কী?
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ধর্মীয় চেতনা জাগানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সুস্থ পরিবেশ ও ইতিবাচক সম্পর্ক
মিডিয়া মিহির: মেয়েদের ধর্মীয় আচরণ—বিশেষত নামাজ ও হিজাব—দুর্বল হয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পরিবেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পারিবারিক ধর্মীয় শিক্ষা বা বংশগত প্রভাব যত শক্তিশালী হোক না কেন, যদি পরিবেশ নেতিবাচক হয় বা বন্ধুমহল অসৎ হয়, তবে সহজেই ধর্মীয় চর্চা ভেঙে পড়তে পারে।
অতএব, অভিভাবকদের প্রথম দায়িত্ব হলো সন্তানকে সঠিক পরিবেশে রাখা এবং তার সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
সমস্যার শুরু কোথায়?
একজন অভিভাবকের অভিযোগ ছিল: “আমার মেয়ে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়মিত হিজাব করত, এমনকি চাদর (একধরণের ঢিলেঢালা বোরকা) ব্যবহার করত। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে ওঠার পর ধীরে ধীরে হিজাবের প্রতি উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। এখন আর নিয়মিত চাদর পরে না। একইসঙ্গে নামাজের প্রতিও মনোযোগ কমে গেছে।”
এটি কেবল পারিবারিক অবহেলার ফল নয়। বরং এটি পরিবেশের প্রভাবের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। যখন একটি শিশু বা কিশোরী নতুন পরিবেশে যায়—বিশেষত বিদ্যালয়, কলেজ বা বন্ধু মহলে—তখন সেখানে পাওয়া প্রভাব তার বিশ্বাস ও আচরণকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
পরিবেশের শক্তি বংশগতির চেয়েও বেশি
কুরআনে বর্ণিত হজরত নূহ (আ.)-এর পুত্রের কাহিনি এই বিষয়ে বড় শিক্ষা। নূহ (আ.) নবী ছিলেন, তবু তাঁর পুত্র খারাপ সঙ্গ বেছে নেওয়ার কারণে পথভ্রষ্ট হলো এবং পরিণামে ধ্বংসের মুখে পড়ল।
এ থেকে বোঝা যায়—পরিবেশের প্রভাব এমনকি নবুওয়াতের বংশধারাকেও অতিক্রম করতে পারে।
অভিভাবকদের করণীয়
মেয়ের আচরণে পরিবর্তন আনতে কেবল বকাঝকা বা নসিহত যথেষ্ট নয়। বরং যেমন নেতিবাচক পরিবেশ শিশুদের প্রভাবিত করে, তেমনি ইতিবাচক পরিবেশ তাদের সঠিক পথে ফেরাতে পারে। এজন্য অভিভাবকদের করণীয় হলো—
- সঠিক পরিবেশ তৈরি করা: মেয়েকে এমন পরিবেশে রাখা, যেখানে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- সৎ সম্পর্ক তৈরি করা: ধর্মপ্রাণ ও সৎ পরিবারের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া।
- ভালো বন্ধু নির্বাচন: যোগ্য ও ধার্মিক বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহ দেওয়া।
- সুস্থ কার্যক্রমে যুক্ত করা: ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দাওয়াতি প্রোগ্রাম বা শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা।
অভিভাবকরা যদি ধৈর্যের সঙ্গে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তবে ধীরে ধীরে মেয়ের মধ্যে আবারও নামাজ ও হিজাবের প্রতি আগ্রহ জাগ্রত হবে। কারণ, ধর্মীয় চেতনা জাগানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সুস্থ পরিবেশ ও ইতিবাচক সম্পর্ক।