হিব্রু গণমাধ্যমের দাবি । গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে ইসরায়েল।
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন । প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির:আন্তর্জাতিক সংবাদ বিভাগ জানিয়েছে, সম্প্রতি আরব দেশগুলো—বিশেষত সৌদি আরব—ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে যে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় হিব্রু দৈনিক ইসরায়েল হায়োম এক বিস্তৃত প্রতিবেদনে দাবি করেছে: গত ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযান ও এর পর গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদক্ষেপ রিয়াদকে তথাকথিত “আব্রাহাম চুক্তি”তে যুক্ত হওয়ার পথও সুগম করেছিল, যে চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যেই কয়েকটি আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
আল–আরবি আল–জাদিদ এর খবরে আরও জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদি নববর্ষ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরব ও ফ্রান্স মিলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে এক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, সৌদি আরব আপাতত ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের পথ থেকে সরে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি হামাস ও তার সমর্থকদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাফল্য।
সৌদি আরব বরাবরই ঘোষণা করে আসছে যে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ কেবল তখনই সম্ভব, যখন ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। তবে ইসরায়েল হায়োম দাবি করছে, রিয়াদ তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার সৌদি যুবরাজের দপ্তরের সঙ্গে একটি টেলিফোন সংলাপ করেন। মার্কিন ও আরব কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই ফোনালাপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দোহায় গাজা যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর।
হিব্রু দৈনিক ইসরায়েল হায়োম জানিয়েছে, ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার এবং সৌদি যুবরাজের দপ্তরের কর্মকর্তারা সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি—বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন ও গাজা—নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় সৌদি পক্ষ ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার যুদ্ধ-পরবর্তী লক্ষ্য এবং যুদ্ধ শেষ হলে গাজা বিষয়ে পরিকল্পনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছিল।
পশ্চিমা ও আরব কূটনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি, রন ডারমার এ আলোচনায় স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিশ্চিত করতে চায় যে ভবিষ্যতে এই সংগঠন যেন আর গাজার শাসনভার গ্রহণ করতে না পারে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ডারমার গাজার জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো শাসন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা মোটেও প্রস্তুত নয় যে, এমন কোনো কাঠামোয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাস্তবে, এই সংলাপের পর সৌদি আরব উপলব্ধি করে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক অগ্রগতির পথে হাঁটতে রাজি নয়—না আলোচনায় বসতে, না এমন কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করতে, যা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যেতে পারে; এমনকি সামরিক শক্তিহীন একটি রাষ্ট্র হলেও।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ প্রেক্ষাপটে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের দপ্তর আরব লীগের উদ্যোগে নির্ধারিত শর্তগুলো ইসরায়েলের কাছে তুলে ধরে। তবে ডারমারের বার্তা ছিল সুস্পষ্ট—বর্তমান পর্যায়ে ইসরায়েল কোনোভাবেই এই পথে অগ্রসর হতে রাজি নয়, এমনকি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও তাদের অবস্থান কী হবে তা অনিশ্চিত।
ইসরায়েল হায়োম তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছে, এই অবস্থান কার্যত সৌদি আরবের স্বাভাবিকীকরণ উদ্যোগকে স্থগিত করছে—যে উদ্যোগ আরব বিশ্বের বিস্তৃত সমর্থন লাভ করেছিল এবং রিয়াদ–তেলআবিব সম্পর্কের সম্ভাব্য স্বাভাবিকীকরণের পথ প্রশস্ত করতে পারত। এক আরব কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এই পরিবর্তন সৌদি নেতৃত্বের সেই অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে, যেখানে তারা ভবিষ্যৎ মধ্যপ্রাচ্যের পরিকল্পনার সমীকরণ থেকে ইসরায়েলকে বাদ দিতে চাইছে—একটি পরিকল্পনা, যা নিয়ে যুবরাজ বিন সালমান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।