কুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

জীবন সম্পর্কিত আয়াত | আল্লাহপ্রেম নাকি দেশপ্রেম?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: কুরআন ও ইমাম আলী (আঃ)-এর উক্তি দেখায় যে, দেশের প্রতি ভালোবাসা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যখন আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের বিষয় আসে, তখন দেশের স্থায়ী বসবাসের চেয়ে হিজরত বা স্থান পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন:

«إِنَّ الَّذِینَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِکَةُ ظَالِمِی أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِیمَ کُنْتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِینَ فِی الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِیهَا فَأُولَٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْ مَصِیرًا
(সূরা নিসা, আয়াত ৯৭)

অর্থাৎ:
যে ব্যক্তিদের মৃত্যু সময় ফেরেশতারা তাদের আত্মা গ্রহন করে, অথচ তারা নিজের প্রতি অন্যায় করেছে, ফেরেশতারা তাদের প্রশ্ন করে: “তোমরা কোন অবস্থায় ছিলে?” তারা উত্তর বলে:“আমরা আমাদের ভূমিতে নিপীড়িত এবং দুর্বল ছিলাম।” ফেরেশতারা বলল: “কিন্তু আল্লাহর ভূমি কি যথেষ্ট বড় ছিল না, যাতে তুমি সেখানে হিজরত করতে পার?” তাদের আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। ফলশ্রুতিতে তাদের গন্তব্য হবে জাহান্নাম, যেখানে তাদের পরিণতি দুঃখজনক ও চরম কষ্টদায়ক হবে।

ব্যাখ্যা:

ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল দেশের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য। ইমাম আলী (আঃ) এই সম্পর্কে বলেন:

«مِن کَرَمِ المَرءِحَنینُهُ إلی أوطانِهِ.» 

(আ‘লামুদ্দিন ফি সফাতুল মুমিনীন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৯)

অর্থাৎ: মানুষের মহত্ত্ব ও উদারতার একটি প্রকাশ হলো তার মাতৃভূমির প্রতি প্রেম ও অনুরাগ।

কিন্তু আরেকটি হাদিসে, ইমাম আলী (আঃ)বলেন:

 مِنْ ضِیقِ اَلْعَطَنِ لُزُومُ اَلْوَطَنِ

(গুরারুল হিকম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৭২)

অর্থাৎ:যে ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজের জন্মভূমির প্রতি আবদ্ধ থাকে, সেটি সংকীর্ণ মনোভাবের প্রকাশ।

এটি একটি গভীর শিক্ষার সূচনা। একদিকে আমাদের মাতৃভূমির প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা ও যত্নবান হওয়ার আদেশ রয়েছে। অন্যদিকে, অতিমাত্রায় আবদ্ধ থাকা বা জন্মভূমির প্রতি অযথা সংযম দেখানো সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচয় দেয়। এই দ্বৈত শিক্ষা আমাদের শেখায়, যে দেশভক্তি সবসময়ই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য কুরআনের দিকে দূষ্টিপাত দিই:

إِنَّ الَّذِینَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِکَةُ ظَالِمِی أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِیمَ كُنْتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِینَ فِی الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِیهَا فَأُولَٰئِکَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْ مَصِیرًا.

যারা মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের হাতে আত্মা হস্তান্তরিত হয়, অথচ নিজের প্রতি অন্যায় করেছে, তাদেরকে ফেরেশতারা প্রশ্ন করে:তোমরা তখন কোন অবস্থায় ছিলে? তারা উত্তর বলে: “আমরা আমাদের ভূমিতে নিপীড়িত ও দুর্বল ছিলাম। ফেরেশতারা জবাব বলে: “কিন্তু আল্লাহর ভূমি কি এত বিস্তৃত ছিল না, যাতে তুমি সেখানে হিজরত করতে পারলে? তাদের আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তাদের গন্তব্য হবে জাহান্নাম, যেখানে তাদের পরিণতি চরম কষ্টদায়ক।

إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِینَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا یَسْتَطِیعُونَ حِیلَةً وَلَا یَهْتَدُونَ سَبِیلًا.
(সূরা নিসা, আয়াত ৯৭–৯৮)

এটি কেবল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুর জন্য প্রযোজ্য যারা সত্যিই নিপীড়িত, যাদের কাছে কোনো পথ বা সমাধান নেই।

উপসংহার ও শিক্ষা:

মাসুমরা (আ.)-এর হাদিস এবং কুরআনের আয়াত আমাদের গভীর শিক্ষা দেয় যে, মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এটি কখনো আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ও বন্দত্বের পথে বাধা হয়ে ওঠা উচিৎ নয়। মানুষের সৃষ্টির প্রকৃত লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদত, এবং আমাদের সমস্ত সম্পদ, শক্তি ও পরিশ্রম এই উদ্দেশ্যেই নিবেদিত হওয়া উচিত। যদি কোনো সময় মাতৃভূমি আল্লাহর পথে চলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেই দেশ ছেড়ে অন্যত্র হিজরত করা বা নতুন স্থানে জীবনধারণ করা উত্তম ও ন্যায়সঙ্গত। তবে যারা এই পদক্ষেপ নিতে সক্ষম নয়, তারা আল্লাহর কাছে নির্দোষ, ক্ষমাপ্রার্থী এবং তাঁর রহমতের অধিকারী।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button