কুরআনইতিহাসকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

দৈনন্দিন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নবী করিম (সা.) এর শিক্ষাসমূহ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন । প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির/জানিয়েছে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবী শুধুমাত্র আনন্দ-উৎসবের স্থান নয়; এটি বিপদ ও কষ্টের সঙ্গে যুক্ত। কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ পৃথিবীকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বা শান্তির স্থান হিসেবে উপস্থাপন করেনি। বিশ্বাসী ব্যক্তি পৃথিবীকে পরকালীন জীবনের দিকে যাত্রার মাধ্যম হিসেবে দেখে। যে ব্যক্তি এমন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে না, সে বিপদের সময় আঘাতবিধ্বস্ত হয়, কারণ সে মনে করে পৃথিবীতে সবকিছু নিয়মমাফিক চলা উচিত। এই কারণে আল্লাহ বলেন:

“আমি আপনাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণের হ্রাস, ফসলের কমতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। যারা ধৈর্যশীল তাদের জন্য সুখবর দাও।”
(সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৫৫)

এই আয়াত অনুযায়ী, আল্লাহ বিশ্বাসীদের পরীক্ষা করেন ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণের হ্রাস এবং ফসলের কমতির মাধ্যমে। যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদের জন্য আনন্দের সংবাদ রয়েছে। এই কারণে বিপদ ও পরীক্ষায় ধৈর্য ধরা বিশ্বাসীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

নবীর গল্প ও উদাহরণ (ইবনে মাসউদের বর্ণনা)

ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন: একদিন আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে পাঁচ জন সাহাবির সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমরা এমন কঠিন খরা সম্মুখীন হয়েছিলাম যে শুধু পানি ও গাছের পাতা ছাড়া কিছুই হাতে আসছিল না। আমরা নবীকে জিজ্ঞেস করলাম, “হে রাসূলুল্লাহ, আমরা কখন পর্যন্ত এই কঠিন খরার মধ্যে থাকব? তিনি বললেন: আমরা জীবিত আছি, ধন্যবাদ জানাও আল্লাহকে। আমি আসমানি কিতাবগুলি পড়েছি যা আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের জন্য নাজিল হয়েছে; সেখানে আমি দেখিনি যে শুধু ধৈর্যশীলরাই জন্নাত লাভ করবে।”

তিনি আরও বলেন: নিশ্চয় ধৈর্যশীলরা তাদের পুরস্কার হিসাব ছাড়াই পাবেন।” (সূরা জুমর, ১০) তারা তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে স্বর্গের কক্ষ লাভ করবে; আমি তাদের আজ ধৈর্যের জন্য পুরস্কৃত করেছি। তারা বিজয়ী।” (সূরা ফুরকান, ৭৫; সূরা মু’মিনুন, ১১১) ধৈর্যের বিনিময়ে তাদের জন্য স্বর্গ ও সূতি কাপড় রয়েছে।” (সূরা ইন্সান, ১২) তারা তাদের ধৈর্যের কারণে দ্বিগুণ পুরস্কার পান।” (সূরা কাসাস, ৫৪)

ধৈর্যশীলদের বৈশিষ্ট্য

ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন, ধৈর্যশীলরা:

১- আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যশীল, পাপ থেকে বিরত থাকে।

২- ন্যায্য আয়ের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করে, মিতব্যয়ী এবং অতিরিক্ত দান করে।

৩- শান্ত, ভদ্র, চিন্তাশীল, ন্যায়পরায়ণ ও সদাচারী।

৪- ঈমানদারদের সাহায্য করে, বিপদে ধৈর্য ধরে, লাভে কৃতজ্ঞ থাকে।

৫- অসভ্য বা অন্যায়ের মুখোমুখি হলে শান্তভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

৬- রাতে আল্লাহর ইবাদত করে, স্থিরভাবে নামাজ পড়ে এবং সেজদা করে।

আল্লাহর প্রদত্ত আলোক

ইবনে মাসউদ বলেন, যাকে আল্লাহ ইসলামের গ্রহণের জন্য স্পষ্ট দৃষ্টি বা আলোক দান করেন, সেই আলো হৃদয়ে নেমে, বিস্তৃত হয়। নবী (সা.) বলেন, আলোর চিহ্ন হলো:

১. ফান্দানো পৃথিবীর প্রলুব্ধি থেকে ফিরে আসা।

২. চিরন্তন ও অনন্ত বিশ্বের দিকে মনোযোগী হওয়া।

৩. মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা।

৪. পৃথিবী থেকে আকাঙ্ক্ষা কমানো এবং সংযমী হওয়া।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button