জীবনযাপনবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণস্বাস্থ্য পরামর্শ

শিশুদের ধৈর্য বৃদ্ধির কার্যকরী গাইডলাইন

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন । প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির : ছোটদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য শেখার সহজ ও প্রায়োগিক উপায়

. বাবামায়ের মাধ্যমে মডেলিং

শিশুরা বড়দের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে শেখে। বাবা-মা চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতেও শান্ত থাকলে এবং ধৈর্য ধরে আচরণ করলে শিশু তার অনুকরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাফিক জ্যামে রাগের পরিবর্তে গভীর শ্বাস নিন এবং শান্ত কণ্ঠে বলুন, “অপেক্ষা করা জীবন-এর অংশ।” গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক মডেলিং শিশুর স্ব-নিয়ন্ত্রণে গভীর প্রভাব ফেলে।

. আবেগের নামকরণ আলোচনা

শিশুরা প্রায়ই জানে না তাদের আবেগ কিভাবে প্রকাশ করতে হবে। তাদের সাহায্য করুন আবেগ শনাক্ত ও নামকরণ করতে, যেমন: “এখন তুমি রাগান্বিত, তাই না?” (Emotion Review, ২০২১) অনুযায়ী, আবেগের নামকরণ শিশুকে সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।

. অনুশীলনমূলক খেলাধুলা

যেসব খেলায় অপেক্ষা বা পালার প্রয়োজন হয়, সেগুলো ধৈর্য চর্চার জন্য উপযুক্ত। যেমন: বোর্ড গেম (মনচ, দাবা) বা কেক তৈরি। (Journal of Educational Psychology, ২০১৯) অনুসারে, পালার ভিত্তিতে খেলা শিশুর স্ব-নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে।
উদাহরণ:

  • লাল/সবুজ লাইট খেলা: লাল কমান্ডে থেমে থাকা অনুশীলন।
  • মিউজিক্যাল স্টপ খেলা: মিউজিক থামলে সকলকে স্থির থাকা।
    এই থামার মুহূর্তগুলো “তৎক্ষণাত প্রতিক্রিয়া দমন” দক্ষতা উন্নত করে।

. সচেতন শ্বাসপ্রশ্বাস ধৈর্য চর্চা

মনোযোগভিত্তিক কৌশল (Mindfulness) শিশুকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ শেখায়। রাগ বা অস্থিরতার সময় কয়েকটি গভীর শ্বাস নেওয়া বা শরীরের অনুভূতিতে মনোযোগ দেওয়া শেখান। (Child Development, ২০২০) অনুযায়ী, ৪–৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য mindfulness অনুশীলন নিয়ন্ত্রণ ও মনোযোগ বাড়ায়।
উদাহরণ: “বেলুনের মতো শ্বাস নেওয়া”—শিশু কল্পনা করে পেট বেলুনের মতো ফুলছে ও ফাঁপছে।

. সমস্যা সমাধানের জন্য উৎসাহিত করা

চাপপূর্ণ পরিস্থিতির পরে শিশুর কাছে প্রশ্ন করুন: “তুমি মনে করো পরের বার কীভাবে করা ভালো হবে?” এই সাধারণ আলাপ শিশুদের পরিকল্পনা ও আত্ম-প্রতিফলনের দক্ষতা বাড়ায়।

. ধৈর্যের জন্য পুরস্কার দেওয়ার উৎসাহ

বাবা-মা এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন যেখানে শিশু ধৈর্য ধরে পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করবে। উদাহরণ: “যদি তুমি রাতের খাবারের পর পর্যন্ত অপেক্ষা করো, তুমি মজাদার একটি ডেজার্ট পাবে।” গবেষণা দেখায়, এটি শিশুর স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও দীর্ঘমেয়াদী পুরস্কারের ধারণা শেখায়।

স্মরণ রাখবেন

  • শাস্তি এড়িয়ে চলুন: আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য শিশুকে শাস্তি দেবেন না; এটি আত্মবিশ্বাস কমায়। শান্তভাবে সমাধান দেখান।
  • শিশুর বয়স বিবেচনা করুন: ৩ বছরের কম শিশুদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স পুরোপুরি বিকশিত হয়নি, তাই তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ সীমিত। প্রত্যাশা বয়স অনুযায়ী রাখুন।
  • শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন: কম শোরগোল ও সীমিত স্ক্রীন টাইম শিশুকে মনোযোগী ও শান্ত থাকতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button