বিশ্ব

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কৌশল: টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কৌশল: টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

মিডিয়া মিহির: ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আব্দুররহিম মুসাভি জানিয়েছেন যে ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশল দেশটির স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (IRGC) স্থলবাহিনীর ট্যাকটিক্যাল সদর দফতর পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এটি শত্রুদের ভুল হিসাব থেকে বিরত রাখছে এবং নতুন আক্রমণের সম্ভাবনাও কার্যত রোধ করছে।

মূল কৌশলগত দিকসমূহ

১. প্রতিরোধক্ষমতা ও সর্বাত্মক প্রস্তুতি

  • স্থল, নৌ, আকাশ, ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার ডোমেইনসহ সবক্ষেত্রে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি একটি স্থায়ী জাতীয় কৌশল।
  • লক্ষ্য হলো আক্রমণের খরচ এত বাড়িয়ে দেওয়া যে শত্রুরা আক্রমণ করার সাহস না পায়।

২. অসামান্য যুদ্ধ ও অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা

  • ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, বিশেষ বাহিনী ও আঞ্চলিক মিত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে সীমান্তের বাইরে হুমকি মোকাবিলা।
  • এর ফলে সম্ভাব্য সংঘাত ইরানের মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়।

৩. বহুমাত্রিক প্রতিরোধ ও কৌশলগত গভীরতা

  • উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিশোধের সক্ষমতা জোরালো করা।
  • নৌবাহিনী, বিমান প্রতিরক্ষা ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ।

৪. সংকেত প্রদান ও উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ

  • সীমিত ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন এবং শত্রুর কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
  • পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়িয়ে কূটনৈতিক সুযোগ খোলা রাখা।

৫. স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প

  • নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, নৌযান ও প্রযুক্তি তৈরি করে বাইরের সরবরাহের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো।
  • দীর্ঘমেয়াদে সরঞ্জাম উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানো।
৬. সমন্বিত নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা
  • সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
  • অতীত যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা নীতি আপডেট করা।

প্রধান চ্যালেঞ্জ

  • অর্থনৈতিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ প্রস্তুতি বজায় রাখা ব্যয়বহুল।
  • প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাযুক্ত দেশগুলো ইরানের হামলার কার্যকারিতা কমাতে পারে।
  • ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি: বড় আকারের প্রতিশোধমূলক হামলা আন্তর্জাতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
  • মিত্র গোষ্ঠীর নির্ভরযোগ্যতা: আঞ্চলিক সহযোগীদের কার্যকারিতা ও আনুগত্য সবসময় নিশ্চিত নয়।

ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশল মূলত প্রতিরোধসর্বাত্মক প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। দেশটি স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্প, বহুমাত্রিক সামরিক সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব ব্যবহার করে শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধে মনোযোগ দিচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও ভূ-রাজনৈতিক চাপ এই কৌশলের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বকে জটিল করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button