হাদিসের আলোকে ফিতরার গুরুত্ব
হাদিসের আলোকে ফিতরার গুরুত্ব
ফিতরা প্রদান করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) আর্থিক আমল ও ইবাদত সমূহের অন্তর্ভুক্ত যার গুরুত্ব মহানবী (সা.)-এর আহলুল বাইত (আ.)-এর রেওয়ায়েত সমূহে আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি।
ইসলামী ফিক্বহ শাস্ত্রে ফিতরা একটি ওয়াজিব আমল এতদর্থে যে কিছু পরিমাণ সম্পদ বা মাল বিশেষ ভাবে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের প্রদান করা। প্রধান খাদ্য হিসেবে প্রতি ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফিতরার যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে ১সা’ (প্রায় তিন কিলোগ্রাম) গম, যব, কিশমিশ, খেজুর ইত্যাদি প্রদান করা অথবা সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করা।
আহলুল বাইত (আ.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত সমূহে ফিতরাকে রোযা কবুল হওয়ার শর্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) বলেন, ঠিক যেমন ভাবে মহানবী (সা.)-এর ওপর দরূদ ও সালাত প্রেরণ নামাযের পূর্ণতাবিধায়ক ঠিক তেমনি রোযা পূর্ণ হওয়ার শর্ত হচ্ছে ফিতরা প্রদান। কারণ যদি কেউ রোযা রাখে এবং ইচ্ছা করে ফিতরা আদায় না করে তাহলে তার রোযায় কোনো লাভ হবে না (ইকবালুল আ’মাল,খ:১,পৃ:২৭৫)
ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর রেওয়ায়তে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর আহলুল বাইত (আ.)-এর ওপর দরূদ ও সালাত প্রেরণের মাধ্যমে নামাযের পূর্ণতা এবং ফিতরার যাকাত আদায়ের মাধ্যমে রমযানের রোযার পূর্ণতার মাঝে তুলনা করেছেন। এ ধরনের তুলনা শিয়া মুসলমানদের কাছে ফিতরার গুরুত্ব ও ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়। সুতরাং যে ব্যক্তি ফিতরা আদায় করে না সে হচ্ছে ঐ মুসলমানের মত যে নামাযের তাশাহহুদে যদি দরূদ ও সালাম প্রেরণ ও পাঠ না করে তাহলে সে যেন কোনো নামাযই আদায় করে নি।
ঠিক একই ভাবে “নি: সন্দেহে যে ব্যক্তি পবিত্র হয়েছে সে সফলকাম হয়েছে”- এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়তে ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ থেকে ফিতরা বের ও আলাদা করে, অত:পর তা প্রদান করে সেই ব্যক্তি পবিত্র ও সফলকাম হয়েছে (ওয়াসাইলুশ শিয়া, খ: ৭, পৃ:৪৫০)
আমীরুল মু’মিনীন ইমাম আলী (আ.)ও ফিতরার যাকাত সংক্রান্ত একটি রেওয়ায়তে বলেন, “যে ব্যক্তি ফিতরা আদায় করে মহান আল্লাহ তার মাল ও সম্পদের অপূর্ণাঙ্গ যাকাতের যে ঘাটতি হয়েছে বা বাকি থেকে গেছে তা পূরণ করে দেন (মান লা ইয়াহদুরুহুল ফকীহ, খ:২, পৃ:১৮৩)
এ রেওয়ায়ত ঐ সব মু’মিনের জন্য যারা ভাবে যে ফিতরার যাকাত আদায় করা তাদের জন্য কঠিন এবং তাদের ধন-সম্পদ হ্রাস পাবে ও কমে যাবে; আর ঠিক এটাই হচ্ছে বরকতের অর্থ। এ সব হাদীস ছাড়াও ফিতরা সংক্রান্ত আরো বহু হাদীস বিদ্যমান রয়েছে যেগুলো চার হাদীস গ্রন্থের সংকলকগণ ফিতরা সংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন ।
মিডিয়া মিহির/হাদিস/ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক, মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান