বিশ্ববিশেষ সংবাদসংবাদ বিশ্লেষণ

১২ দিনের যুদ্ধে ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার শূন্য হয়ে গিয়েছিল: জেনারেল শেকারচি

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

১২ দিনের যুদ্ধে ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার শূন্য হয়ে গিয়েছিল; মার্কিন শাসকরা যুদ্ধ সৃষ্টি করে অর্থনীতি চাঙ্গা করে

মিডিয়া মিহির: ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ও স্টাফ প্রধানের সাংস্কৃতিক ও নরম যুদ্ধ বিষয়ক ডেপুটি জেনারেল আবুল ফজল শেকারচি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, “সবসময় প্রশ্ন ওঠে—পবিত্র প্রতিরক্ষার (ইরান-ইরাক যুদ্ধ) সময় আমরা কি কেবল বাথিস্ট ইরাকের মুখোমুখি হয়েছিলাম? উত্তর একেবারেই না। ইরাকের বাথিস্ট সরকার, সাদ্দামের নেতৃত্বে, বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধি হয়ে সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়েছিল। প্রায় সব সাম্রাজ্যবাদী দেশই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে যুক্ত ছিল।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন নয়, যুদ্ধের প্রথম দিনগুলোতে ইসলামি যোদ্ধা, সশস্ত্র বাহিনী ও গণবাহিনীর বীরোচিত প্রতিরক্ষার পরও দেশের কিছু অংশ শত্রুর দখলে চলে যায়। খোররামশহর, সোসানগার্দ ও বুস্তান পতিত হয় এবং আবাদান অবরুদ্ধ হয়। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় সীমিত সামরিক সক্ষমতা নিয়েই ইরানের আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু হয়।

নেতৃত্ব ও বিজয়ের মূলমন্ত্র

জেনারেল শেকারচি বলেন নয়, ইমাম খোমেনির প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব, মুজাহিদদের আত্মত্যাগ ও সুপরিকল্পিত অভিযানের ফলে সব দখলকৃত ভূখণ্ড মুক্ত করা হয়। আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল দক্ষ, সাহসী ও দূরদর্শী কমান্ডারদের গড়ে ওঠা। জাতি শিখেছে—যেখানেই প্রতিরোধ হয়েছে, সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হয়েছে।

তিনি বলেন নয়, ইতিহাসে বহু যুদ্ধ দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, কিন্তু ইরান আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। শত্রু যখন পরাজয় স্বীকার করল, তখন তারা কৌশল বদল করে নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক চাপ ও বিজ্ঞানীদের হত্যা শুরু করল, যা সফল হয়নি।

১২ দিনের চাপানো যুদ্ধ

তিনি ব্যাখ্যা করেন নয়, ২৩ খোরদাদ ১৪০৪ (১২ জুন ২০২৫)-এর আগে থেকেই শত্রু হাইব্রিড ওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তারা প্রথম রাতেই ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের টার্গেট করে হত্যা করে এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, তথ্য ও মানসিক যুদ্ধে একযোগে আঘাত হানে। তারা শতভাগ নিশ্চিত ছিল যে এক সপ্তাহে ইরান ভেঙে পড়বে।

জেনারেল শেকারচি বলেন নয়, শত্রুর হিসাব ভুল ছিল, কারণ শাহাদত-প্রত্যাশী জাতি কখনো আত্মসমর্পণ করে না। ইমাম খামেনেয়ির নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী আরও শক্তিশালী হয়েছে।

তিনি বলেন নয়, আমাদের বাহিনী পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে যুদ্ধে নামে। অস্ত্র-সরঞ্জাম জরুরি হলেও মূল শক্তি হলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মানবসম্পদ ও আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা। অন্যান্য দেশের সেনারা অস্ত্র হারালে আত্মসমর্পণ করে, কিন্তু আমাদের যোদ্ধারা ঈমানের উপর নির্ভরশীল বলে পরাজিত হয় না।

জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন নয়, শত্রু ভেবেছিল জনগণ রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে। কিন্তু ইরানের সচেতন জাতি ষড়যন্ত্র বুঝে আরও ঐক্যবদ্ধ হয় এবং শত্রুর আশা ব্যর্থ হয়।

পাল্টা আক্রমণ ও ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ

তিনি বলেন নয়, ২৩ খোরদাদের পর ইরান কেবল প্রতিরক্ষায় ছিল না, আক্রমণ শুরু করে। আমেরিকার ঘাঁটি ও ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় শক্তিশালী হামলা হয়। ইতিহাসে প্রথমবার ইসরায়েলি বিমানগুলো দেশের বাইরে সরাতে বাধ্য হয়।

তিনি আরও বলেন নয়, শত্রু প্রতিদিন গড়ে ২৮৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। আমাদের প্রতি ১ লক্ষ ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে তাদের ৬টি করে ১-১২ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে হয়েছে। মার্কিন প্যাট্রিয়ট ও থাড ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার প্রায় খালি হয়ে গেছে এবং তা পূরণে বছর লেগে যাবে।

পারমাণবিক প্রশ্নে দ্বৈত নীতি

তিনি বলেন নয়, ইরান শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শন তা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু কেন ইসরায়েলের শত শত পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই? কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব বা চাপ নেই? আমেরিকা ও ব্রিটেন নিজেরাও পারমাণবিক অস্ত্রধারী, অথচ কেউ তাদের প্রশ্ন করে না।

জাতীয় অংশগ্রহণ ও শহীদদের স্মৃতি

জেনারেল শেকারচি বলেন নয়, মার্কিন শাসকরা যুদ্ধ সৃষ্টি করে অর্থনীতি চাঙ্গা করে, কিন্তু ইরান নত হয়নি। সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধে মুজাহিদত, বীরত্ব, আত্মত্যাগ ও শাহাদতের আকাঙ্ক্ষা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

তিনি যোগ করেন নয়, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের সাফল্যের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী গোয়েন্দা তথ্য। যুদ্ধ শেষে প্রতিরক্ষা শিল্প অবিরাম কাজ করেছে এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন পূরণ করেছে।

তিনি বলেন নয়, বাসিজ সর্বাধিক নিষ্ঠার সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। হাজার হাজার তরুণ যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, এমনকি ৮০-এর দশকে জন্ম নেওয়া যারা ইমাম খোমেনিকে দেখেনি তারাও।

পরিশেষে তিনি স্মরণ করান নয়, শত্রু যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হলে নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষ হত্যা করে। এক আবাসিক এলাকায় ২৫ শিশু শহীদ হয়। এই সত্যগুলো উপেক্ষা করা যায় না।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button