বিশ্বকুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

হিংসার মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি ও কারণসমূহ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: হিংসা সৃষ্টি বা তীব্রতার জন্য বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক কারণ এবং প্রক্রিয়া দায়ী। এদের মধ্যে প্রধানগুলো হলো:

১. আত্মমর্যাদা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব
অর্থাৎ, ব্যক্তি নিজেকে ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে না। সে সবসময় মনে করে যে সে ব্যর্থ হবে, অন্যরা তার চেয়ে ভালো এবং যে কোনো কাজে সে ব্যর্থ হবে।

২. আবেগের অভাব
এটি এমন অনুভূতি, যেমন—”আমি ভালোবাসার যোগ্য নই”, “কারো আমাকে ভালো লাগবে না”, বা “আমি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই”।
যারা বড় পরিবারে বড় হয়েছেন এবং পিতামাতার কাছ থেকে পর্যাপ্ত স্নেহ বা যত্ন পাননি, তাদের মধ্যে এই অভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। আবেগের এই ঘাটতি—যা প্রতিটি শিশুর মৌলিক চাহিদার একটি—পিতামাতা পূরণ করেননি।

ফলস্বরূপ, আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা তৈরি হয়। অর্থাৎ, যখন শিশু তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চেয়েছিল, তখন তাকে আটকানো হয় এবং সঠিকভাবে আবেগের স্থানান্তর ঘটেনি। বড় হওয়ার পর এমন একজন ব্যক্তি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত হয়ে যায় এবং স্ত্রী বা স্বামীকে সঠিকভাবে আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। সে অন্য পুরুষদের হিংসা করতে পারে যারা সহজেই “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বা “আমি তোমার প্রেমে পড়েছি” বলতে পারে, কিন্তু সে নিজে তা করতে পারে না। এটি আবেগের ঘাটতি এবং হিংসার একটি মূল কারণ।

৩. তুলনার ভীতি
যেমনটি আগে হিংসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, হিংসার অন্যতম কারণ হলো অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করার সময় সৃষ্ট আবেগীয় ভীতি। উদাহরণস্বরূপ:

১. সে কেন এগিয়েছে, আর আমি কেন না?

২. সে কেন কিছু কিনেছে, আর আমি কেন কিনিনি?

৩. তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, আর আমার কেন নয়?

৪. তারা সন্তান হয়েছে , আর আমি কেন  হয় না?

অর্থাৎ, ব্যক্তি তার পুরো জীবন অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে এবং এমন একটি বিষয় নির্বাচন করে যা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াই হিংসাকে আরও তীব্র করে।

অনুভব থেকে দেখা গেছে, যারা শৈশব বা কৈশোরে অভিভাবকদের ক্রমাগত সমালোচনা ও তুলনার শিকার হয়েছে—যেমন:
দেখো, তমামি গিয়ে কাজ করছে”, “তারা পড়াশোনা করেছে এবং স্নাতক হয়েছে”, “তার নম্বর ভালো, আর তোমার কিছুই নেই”, “তুমি মোটেও কাজে লাগো না”—এরা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে হিংসা প্রবণতায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

৪. নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি
অনেক হিংসুক ব্যক্তির মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি থাকে। তারা উদ্বিগ্ন প্রকৃতির এবং সবসময় ভাবতে থাকে:

১. “আমি পিছিয়ে আছি”

২. “অন্যান্যরা এগিয়েছে, আমি কেন না?”

৩. “সে এইসব কিছু পাচ্ছে, আর আমি পাচ্ছি না?”

৪. “আমি যতটুকু চেষ্টা করেছি, সে ও করেছে, কিন্তু সে বেশি সফল হয়েছে”

এই নিরাপত্তাহীনতা মনের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় ব্যক্তি প্রতিভা, পারিবারিক পরিস্থিতি, সম্পদ বা অন্যের অতিরিক্ত চেষ্টা পর্যন্ত বিবেচনা করে না। হয়তো অন্যের পক্ষে আর্থিক সমর্থন বেশি ছিল, হয়তো সে আরও পরিশ্রম করেছে বা ভালো পরামর্শ পেয়েছে, বা তার “এই তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যের ধন-সম্পদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, নিজের অবস্থার প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার বদলে, হিংসা বাড়ানোর একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে ‘আবেগীয় অভাব’ মতো অন্যান্য প্রক্রিয়াও ভূমিকা রাখে।

আবেগীয় অভাব বা এমনকি ‘আর্থিক অভাব’ও হিংসা সৃষ্টি বা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কেউ এমন একটি পরিবারে বড় হতে পারে, যেখানে আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, শৈশবে পর্যাপ্ত খেলনা বা বন্ধু ছিল না, অথবা এমন কোনো অঞ্চলে বসবাস করেছে যা সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে। যখন এমন ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে শহরে আসে এবং ব্যাপক তুলনার মুখোমুখি হয়, তখন তার মধ্যে হিংসার অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button