বিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতার বক্তব্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতি

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৯ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: হামাসের জ্যেষ্ঠ সদস্য উসামা হামদান  যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে যুদ্ধ বন্ধকেই প্রধান শর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা শহর, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল, রাফাহ এবং খান ইউনুস থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে এবং পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিং বা প্রবেশদ্বার পুনরায় খুলে দিতে হবে।

ফিলিস্তিন ইনফরমেশন সেন্টার ও ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সি–এর বরাতে জানা গেছে, হামাস আন্দোলনের শীর্ষ নেতা উসামা হামদান টেলিভিশন চ্যানেল আল-আরাবি–র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গাজা যুদ্ধের অবসান সংক্রান্ত চুক্তির বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দুই পক্ষ যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, তা গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান নির্দেশ করে। হামদান বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর আচরণ এবং চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

এই হামাস নেতা আরও বলেন, বন্দি বিনিময় কার্যক্রম কেবল তখনই শুরু হবে, যখন যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে গাজার ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের সম্পূর্ণ অবসান।

হামদানের ভাষ্য অনুযায়ী, মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে ইসরায়েল এই চুক্তি লঙ্ঘন করবে না, এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হবে।

এই হামাস নেতা আরও বলেন, চুক্তির আওতায় আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দি এবং গাজার ১,৭০০ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় বন্দি নেতৃবৃন্দের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

হামদান জানান, ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। চুক্তির ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দখলদার সেনাবাহিনীকে গাজা শহর, গাজার উত্তরাঞ্চল, রাফাহ ও খান ইউনুস থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, চুক্তির প্রথম ধাপেই ফিলিস্তিনি জনগণের প্রধান দাবি—যুদ্ধ বন্ধের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে, এবং একই সঙ্গে মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খুলে দেওয়া হবে।

হামদান আরও বলেন, বন্দি বিনিময় কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে গাজার আকাশে ইসরায়েলি ড্রোনের উড্ডয়ন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তার ভাষ্যে, মানবিক সহায়তা বিতরণের ওপর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তদারকি করবে, ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত কোনো স্থানীয় প্রতিষ্ঠান নয়।

তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠন চুক্তি বাস্তবায়নে ইসরায়েলের পূর্ণ প্রতিশ্রুতির নিশ্চয়তা দাবি করেছে।

হামদান আরও উল্লেখ করেন, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা প্রশাসন পরিচালিত হবে ফিলিস্তিনের জাতীয় ব্যক্তিত্বদের হাতে, কোনো ধরনের ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ ছাড়াই। ফিলিস্তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠী গাজার প্রশাসনের জন্য ৪০ জনের একটি নামের তালিকা প্রস্তাব করেছে।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা কখনোই দখলদারদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেব না।”

উসামা হামদান আঞ্চলিক দেশসমূহ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, যে কেউ আমাদের জাতিকে সাহায্য করতে চায়, তাকে তা করতে হবে কোনো ধরনের অভিভাবকত্ব বা আধিপত্য চাপিয়ে না দিয়ে।”

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button