কুরআনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

হাদিসের আলোকে ইস্তিগফার

উম্মে যাহরা আহমেদ | প্রকাশ: ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত এবং নবী করীম–ইমামদের (আ.) হাদিসে ইস্তিগফার তথা তওবা— অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকে— অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামে ইস্তিগফারকে শুধু একটি দোয়া হিসেবে নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতি ও আত্মশুদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হাদিসে ইস্তিগফারের গুরুত্ব
নবী মুহাম্মদ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন— “সর্বোত্তম ইবাদত হলো ইস্তিগফার, কারণ আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেনو ‘জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং তোমরা তোমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ১৯]

আরেক বর্ণনায় ইস্তিগফারের সর্বোত্তম দোয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে— “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”—‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই’।

ইমাম আলী (আ.)–এর দৃষ্টিতে ইস্তিগফার
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন— ইস্তিগফার পাপীর জন্য সর্বোৎকৃষ্ট আশ্রয়, ভুল সংশোধনের শক্তিশালী মাধ্যম এবং আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ পথ।

নাহজুল বালাগা-এর ৪১৭ নম্বর বাণীতে তিনি বলেন— “ইস্তিগফার মূলত সেইসব ব্যক্তির জন্য, যারা সত্যিকারের উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।”

ইমাম সাদিক (আ.)–এর ব্যাখ্যা
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন— “একজন মুমিন পাপ করলে আল্লাহ তাকে সতর্ক করতে সামান্য বিপদ বা কষ্ট দিতে পারেন, যাতে সে ইস্তিগফার করে ফিরে আসে। কিন্তু স্বভাবগতভাবে পাপী মানুষ যখন পাপ করে, তখন তাকে শাস্তি না দিয়ে বরং দুনিয়ার দান–ধনে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে সে ভুলে যায় এবং সেই অবস্থায়ই নিমজ্জিত থাকে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি কোরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করেন— “যারা আমাদের আয়াতকে মিথ্যা বলে, আমরা তাদের ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই।” [সূরা আল–আ‘রাফ, আয়াত ১৮২]

সৎ মানুষের সমস্যা বনাম পাপীর সুবিধা— ইসলামের ব্যাখ্যা
ইসলামের দৃষ্টিতে, কোনো ঈমানদার ও সৎ মানুষ দুনিয়ার পরীক্ষায় পড়লে তা তার শুদ্ধি ও উন্নতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা।

আর কোনো পাপী মানুষের দুনিয়ায় সচ্ছল থাকা তার জন্য কল্যাণ নয়; বরং সে সত্য থেকে দূরে যাওয়ায় আল্লাহ তাকে সতর্ক করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় মানুষ নিজের কর্মের ফলেই পরিণামে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়— দুনিয়াতেও এবং পরকালেও।

আল্লাহর দরজা সবসময় খোলা
তবুও, ইসলাম জানায়— যে কোনো মুহূর্তে, যেকোনো ব্যক্তি, যত পাপীই হোক না কেন, আন্তরিক তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করেন।

এক হাদিসে উল্লেখ আছে— যদি ফেরাউন ডুবে যাওয়ার ঠিক আগে সত্যিকার অর্থে তওবা করত, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করতেন।

মানবিক স্বাধীন ইচ্ছাই নির্ধারণ করে পরিণতি
আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন—যা তাকে অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে। এই স্বাধীন ইচ্ছাই নির্ধারণ করে মানুষ কোন পথ বেছে নেবে— পথভ্রষ্টতা নাকি মুক্তির পথ।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button