বিশেষ সংবাদজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশ্ব

হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আত কি পাপীদের পাপ করার সাহস বাড়িয়ে দেয় না?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আধুনিক যুগে যখন অনেকে শাফা‘আতের ধারণাকে ভুল বুঝে পাপের প্রতি উৎসাহ হিসেবে দেখেন, তখন প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা স্পষ্ট করে যে, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আত কেবল তাদের জন্যই যারা গুনাহ থেকে অনুতপ্ত, আহলে বাইতের ভালোবাসায় আবদ্ধ এবং সাদাতকে কষ্ট দেয় না। এই শাফা‘আতের প্রতিশ্রুতি কখনো গুনাহের প্রতি সাহস যোগায় না; বরং এটি অন্ধকারে আলোর মতো একটি আশার কিরণ—যা পথভ্রষ্টদের তাওবাহ ও প্রত্যাবর্তনের পথ দেখায়।

আয়াতুল্লাহিল উযমা জাওয়াদী আমুলী (দা.)-এর একটি গ্রন্থে এই শুবহা (সন্দেহ)-এর উত্তর প্রদান করা হয়েছে যে, “হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আতের প্রতিশ্রুতি কি গুনাহগারদের গুনাহ করার প্রতি আরও সাহসী করে তোলে না?

প্রশ্ন: শাফা‘আতের প্রতিশ্রুতি কি গুনাহগারদের গুনাহের প্রতি উদ্ধত ও সাহসী করে না?

উত্তর: শাফা‘আত একটি সুচিকিৎসক ঔষধের মতো—যা কোনো বিবেকবান মানুষকে রোগে আক্রান্ত হতে উৎসাহিত করে না; বরং এটি কেবল রোগীদের নিরাময়ের একমাত্র উপায়।

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আত লাভের শর্তসমূহ: যাতে কারও উপর এই শাফা‘আত কার্যকর হয়, তার জন্য কতিপয় অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১.সে মুশরিক, কাফির, মুনাফিক অথবা নাসিবী না হওয়া।

২.গুনাহ থেকে সত্যিকারের অনুতাপ ও পস্তাতপ করা।

৩.আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) ও আহলে বাইত (আ.)-এর বেলায়তকে পূর্ণ হৃদয়ে কবুল করা।

৪.শীয়াহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধরদের প্রতি ভালোবাসা রাখা।

৫.সাদাতকে কষ্ট না দেওয়া।

শাফা‘আতের মূল শর্ত হলো গুনাহ থেকে নাদামত এবং ঈমানের মৌলিক ভিত্তি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:

«وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ» (তারা শাফা‘আত করবে না কেবল তাদের জন্য ছাড়া যাদের প্রতি [আল্লাহ] সন্তুষ্ট। — সূরা আল-আম্বিয়া: ২৮)

কেন শাফা‘আত গুনাহের প্রতি সাহস যোগায় না?

১. আল্লাহ তা‘আলা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি যে, কাদের উপর শাফা‘আত হবে; সুতরাং কেউ নিশ্চিতভাবে এর উপর ভরসা করে বসতে পারে না।

২. প্রকৃত মু’মিন সর্বদা আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তাঁর রহমতের আশার মাঝে দোলায়মান থাকে।

৩. পবিত্র কুরআন স্পষ্ট সতর্কবাণী দিয়েছে যে, কেউ নিজেকে আল্লাহর মকর (পরিকল্পনা) থেকে নিরাপদ মনে করবে না।

৪. গুনাহের উপর অটল থাকা কুফর ও হৃদয়ের কঠোরতায় পরিণত হতে পারে।

হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আত কখনো গুনাহগারদের উদ্ধত করে না; বরং এটি তাদের জন্য একটি আশার আলো—যারা ঈমানের পথে পিছলে পড়েছে, কিন্তু ফিরে আসার এবং অতীতের ভুলগুলো সংশোধনের সংকল্প রাখে। এই মহান অনুগ্রহ অন্ধকারে একটি জ্যোতির মতো, যা অনুতপ্তদের পথ দেখায় এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়।

সূত্র: তাসনীম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৭০–২৭৩।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button