ইতিহাসধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)—আহলে বাইত (আ.)–এর প্রতি গভীর মারেফত ও আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামের ইতিহাসে হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.) এমন এক মহীয়সী নারীর নাম, যিনি ইমামত ও নবুয়তের পরিবারের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা, অটল আনুগত্য, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে নারীর মর্যাদাকে এক অভিনব উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আহলে বাইত (আ.)–এর প্রতি তাঁর অন্তর্গত শ্রদ্ধা, গভীর জ্ঞান ও মারেফতের উজ্জ্বল প্রকাশ বহন করে।

হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর সর্বাধিক উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য ছিল আহলে বাইত (আ.)–এর মর্যাদা ও মাকাম সম্পর্কে তাঁর বিস্ময়কর জ্ঞান, উপলব্ধি এবং আন্তরিক ভালোবাসা। তিনি তাঁর সমগ্র জীবনকে ইমামত ও নবুয়তের পরিবারের প্রতি নিষ্কলুষ আনুগত্য, ভক্তি ও সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন। ফলে আহলে বাইত (আ.)–এর কাছে তাঁর স্থান ছিল অত্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ।

ইসলামের মহীয়সী ব্যক্তিত্বদের জীবনপরিচয় তুলে ধরা সমাজে ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচারের অন্যতম কার্যকর উপায়। হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর জীবনও বর্তমান সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার দীপশিখা।

হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.) ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য মর্যাদাসম্পন্ন নারীর প্রতিচ্ছবি। নানা গুণাবলীর সমন্বয়ে গঠিত এই মহান নারী আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.)–এর সহধর্মিণী এবং হযরত আবুল ফজল আল-আব্বাস (আ.)–এর জননী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

অতুলনীয় ধৈর্য, ঈমান ও আত্মত্যাগ

তাঁর ধৈর্য ও স্থিরতা ছিল বিস্ময়কর। ইমাম আলী (আ.) যখন তাঁকে তাঁর পুত্র আবুল ফজল আল-আব্বাস (আ.)–এর শাহাদাতের সংবাদ অগ্রিমভাবে দেন, তখন তিনি গভীর ঈমান, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা নিয়ে তা গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে তাঁর সন্তান ইমাম হুসাইন (আ.)–এর পথে আত্মোৎসর্গের সৌভাগ্য অর্জন করবেন।

তিনি তাঁর চার সন্তানকেই ইমাম হুসাইন (আ.)–এর লক্ষ্য ও আদর্শের জন্য উৎসর্গ করেন; ইতিহাসে কোথাও তাঁর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ, অনুশোচনা বা দ্বিধার চিহ্ন পাওয়া যায় না। সত্য, ন্যায় ও ইমামের পথে আত্মনিবেদনই ছিল তাঁর জীবনের প্রধানতম আদর্শ।

হযরত আবুল ফজল (আ.)—বীরত্ব, আনুগত্য ও শিষ্টাচারের প্রতীক

হযরত আবুল ফজল আব্বাস (আ.) ছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সন্তান। আশুরার প্রান্তরে তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)–এর সুরক্ষায় সর্বশক্তি নিবেদন করেন এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে শাহাদাত লাভ করেন। তাঁর আরও তিন পুত্রও কারবালার ময়দানে শাহাদাতবরণ করেন।

আধুনিক সমাজের জন্য আত্মত্যাগের শিক্ষা

আজকের সমাজে দায়িত্ববোধ, মানবিকতা ও নৈতিক অঙ্গীকার যেখানে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, সেখানে হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর জীবনধারা আত্মত্যাগ ও নৈতিকতার জীবন্ত শিক্ষা হয়ে ওঠে। শহীদদের ত্যাগ–তিতিক্ষা তাঁর জীবনদর্শনেরই ধারাবাহিকতা বহন করে।

সন্তান–লালনে আদর্শ মা

তাঁর চরিত্র ও শিক্ষার প্রতিফলন সন্তানের জীবনে সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। তাঁদের সাহস, শিষ্টাচার, ভদ্রতা, বীরত্ব এবং ইমামের প্রতি গভীর সম্মান মায়ের শিক্ষারই উত্তরাধিকার।

ফোরাতে পানি পাওয়ার পরও হযরত আবুল ফজল (আ.) ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাবুর শিশুদের তৃষ্ণার্ত অবস্থার কথা স্মরণ করে নিজে পানি পান না করার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন—তা তাঁর মায়ের শিখিয়ে দেওয়া আদব, শ্রদ্ধা ও নৈতিকতারই প্রকাশ।

আহলে বাইত (আ.)–এর প্রতি গভীর মারেফত—তাঁর সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্য

নীতিবোধ, বিনয়, আনুগত্য ও মানবিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ এই মহীয়সী নারীর শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য ছিল আহলে বাইত (আ.)–এর মর্যাদা, গুরুত্ব ও মাকাম সম্পর্কে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান। তিনি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করেছিলেন।

হযরত উম্মুল বানীন (সা.আ.)–এর মতো মহীয়সী ব্যক্তিত্বদের জীবন সমাজে ইসলামী নৈতিকতা, পারিবারিক শান্তি, মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় গভীর প্রভাব রাখতে পারে। তাঁর জীবন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আদর্শ, শক্তি ও আলোকবর্তিকা।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button