স্বৈরাচারী জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণের কৌশল
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৯ অক্টোবর
মিডিয়া মিহির: বিয়ের প্রথম ছয় মাসে সম্পর্কের টানাপোড়েন, মতবিরোধ, এমনকি হতাশা—এসব কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। জীবনসঙ্গী সম্পর্কে কল্পিত ধারণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সংঘর্ষই অধিকাংশ নতুন দাম্পত্যে অস্থিরতা আনে। বিচ্ছেদের কথা ভাবার আগে প্রয়োজন ধৈর্য, সংলাপ ও বাস্তবতাবোধ।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন রেজা ইউসুফজাদে, যিনি একজন পরিবার ও বৈবাহিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতা, সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় অংশ নেন। সেখানে তিনি “বিয়ের শুরুতে জীবনসঙ্গীর নেতিবাচক আচরণ: সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার কৌশল” শিরোনামে একটি প্রশ্নোত্তরভিত্তিক আলোচনা পরিচালনা করেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি ও পরামর্শসমূহ এখানে তুলে ধরা হলো, যাতে আমাদের প্রজ্ঞাবান পাঠকরা সম্পর্কের সূচনালগ্নে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো আরও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন
প্রথম পাঠ: কল্পনা থেকে বাস্তবে ফেরা
বিয়ের সময় আমরা অনেকেই এক আদর্শ জীবনসঙ্গীর ছবি আঁকি—যিনি সর্বদা বুঝবেন, কোমল হবেন, ঠিক আমাদের মতো চিন্তা করবেন। কিন্তু সংসার শুরু হতেই যখন তাঁর অন্য রূপ—রাগ, শাসন, নিজের মতামত প্রকাশ—দেখা দেয়, আমরা বিভ্রান্ত হই।
বাস্তবতা হলো, এই পার্থক্যই জীবনের স্বাভাবিক অংশ। বিয়ের প্রথম বছর আসলে পরস্পরকে “চেনা” এবং “মানিয়ে নেওয়া”-র সময়। এই সময়ই বোঝা যায়, কল্পনার মানুষ আর বাস্তব মানুষটি কতটা ভিন্ন।
দ্বিতীয় পাঠ: নিজের মানদণ্ড পর্যালোচনা করুন
জীবনসঙ্গীর আচরণ কঠোর মনে হলে, আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন—তিনি কি সত্যিই এমন, নাকি আমি অতিরিক্ত প্রত্যাশা করেছি? অনেক সময় আমাদের মানসিক কাঠামো এতটাই আদর্শিক হয় যে, বাস্তব মানুষকে আমরা সেই ছাঁচে ফেলতে পারি না।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন—
বিচ্ছেদের আগে প্রথমে তোমার মনে থাকা কল্পিত স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করো।
বাস্তব মানুষকে যেমন তিনি, তেমনভাবেই বুঝতে শেখা—সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রথম শর্ত।
তৃতীয় পাঠ: কথা বলুন, তবে সম্মানের সঙ্গে
নীরবতা কখনও সমস্যার সমাধান নয়। বরং সৎ, শান্ত ও সম্মানজনক সংলাপই সম্পর্ক বাঁচায়। অভিযোগ নয়, অনুভূতি প্রকাশ করুন। যেমন—
“তুমি সবসময় আমাকে দমন করো” বলার বদলে বলুন, “তুমি রাগ করলে আমি কষ্ট পাই। এইরকম যোগাযোগ সম্পর্কের উত্তেজনা কমায়, এবং উভয়ের অনুভূতির জায়গা খুলে দেয়।
চতুর্থ পাঠ: প্রয়োজনে সহায়তা নিন
যদি সম্পর্কের টানাপোড়েন এতটাই বেড়ে যায় যে একা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, তাহলে দ্বিধা না করে পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য নিন। একজন অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা নিরপেক্ষভাবে আপনাদের উভয়ের অবস্থান বুঝে সম্পর্কের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে পারেন।
উপসংহার: ভালোবাসার স্থায়িত্ব আসে বোঝাপড়া থেকে
প্রথম দিকের ঝামেলা মানেই সম্পর্কের শেষ নয়, বরং এটি বোঝাপড়ার সূচনা। পুরোনো প্রবাদ আছে—
“যদি প্রথম তিন বছর একসঙ্গে থাকতে পারো, তবে তিরিশ বছরও পারবে।”
তাই তাড়াহুড়ো নয়, ধৈর্য ধরুন। জীবনসঙ্গীকে বোঝার চেষ্টা করুন, কথা বলুন, প্রয়োজনে সহায়তা নিন। কারণ, সম্পর্ক টিকে থাকে ভালোবাসায় নয়—বোঝাপড়ায়। আর সেই বোঝাপড়া গড়ে ওঠে শুধুমাত্র সময়, সম্মান ও সংলাপের মাধ্যমে।



