ধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

সালাফিবাদ: এক সংকীর্ণ পথের দ্বন্দ্বময় দর্শন

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: সালাফিদের পূর্বসূরি-সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সালাফিবাদ নামে একটি নতুন ধর্মীয় মতবাদ গঠিত হয়েছে, যা সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলিতে ইসলামী জগতে আত্মপ্রকাশ করে।

ঐতিহাসিকভাবে, সালাফি চিন্তার কিছু প্রাথমিক রূপরেখা চতুর্থ হিজরি শতাব্দীতে দেখা গেলেও, তা মুসলিম সমাজের মূলধারার চিন্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় খুব দ্রুতই নিঃশেষ হয়ে যায়।

পরবর্তীতে সপ্তম শতকে ইবনে তায়মিয়াহ এই মতবাদকে পুনর্জীবিত করেন এবং এর মাধ্যমে ইসলামী বিশ্বে মতবিরোধের আগুন জ্বালিয়ে দেন। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর শিষ্য ইবনে কাইয়্যিম এই চিন্তাধারাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বহু চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারেননি।

দ্বাদশ শতকে, সালাফিবাদের বিভিন্ন ধারা নাজদ, হিজাজ এবং উপমহাদেশে শুরু হয়, যদিও এগুলোর মধ্যে পার্থক্য ছিল। বিশেষ করে ইংরেজদের রাজনৈতিক সামরিক সমর্থনের ফলে, নাজদ ও হিজাজে এই মতবাদ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে।

আধুনিক যুগে, সালাফিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা ইসলামী দেশগুলোতে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে।

বর্তমানে সালাফিবাদে রয়েছে বিভিন্ন শাখা ও প্রবাহ, যা বিস্তৃত মতবাদ ও বিশ্বাসের পরিসর গঠন করেছে।

সালাফিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য ও মতবাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব

সালাফিবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—ইসলামের প্রচলিত চারটি মাজহাবসহ অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদকে অস্বীকার করা, এবং মুসলমানদেরকে চিন্তা ও বিশ্লেষণহীনভাবে অতীতের অনুসরণে বাধ্য করা

ওহাবি মতাবলম্বীরা মুসলমানদেরকে এমন এক ধর্মচর্চায় আহ্বান জানায়, যা তারা মাজহাববিহীন ইসলাম” বলে অভিহিত করে। এই নতুন মতবাদে ইসলামের কোনো প্রচলিত মাজহাবকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। বরং শুধুমাত্র সালাফ বা প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের (যাদেরকে “কুরুনে মুফাজ্জালা” বলা হয়) অন্ধ অনুসরণই এই মতবাদের মূল ভিত্তি।

তবে এখানে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে—সালাফিরা মুসলমানদেরকে নিজ নিজ মাজহাব পরিত্যাগ করতে বলেন, অথচ নিজেরাই সালাফিবাদ” নামে একটি নতুন মাজহাব প্রতিষ্ঠা করেছেন; যা ইসলামের ইতিহাসে কোনো পূর্বসূরি ভিত্তি বা স্বীকৃত ঐতিহ্য বহন করে না।

সুপরিচিত সুন্নি চিন্তাবিদ সাঈদ রমজান আল-বুতি এই মতবাদকে একটি ধর্মীয় বিদআত হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা ইসলামের মূলধারার চিন্তা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পদটিকা: লেখক: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন ড. সাইয়্যেদ মাহদী আলীজাদেহ মুসাভী, সালাফিগারী ও ওহাবীয়াত, খন্ড ১, পূষ্টা ৩৪।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button