বিশ্ববিশেষ সংবাদসংবাদ বিশ্লেষণ

রিয়াদকে সানার হুঁশিয়ারি :লোহিত সাগরে ইসরায়েলকে রক্ষা করবেন না

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন । প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির:সংবাদ বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, সৌদি আরব ও এর আন্তর্জাতিক অংশীদাররা ইয়েমেনের ইসরায়েলবিরোধী সামরিক অভিযানের মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে চাইছে এমন নড়াচড়া পর্যবেক্ষণের পর, আনসারুল্লাহ আন্দোলন রিয়াদকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে দখলদার শাসনকে (ইসরায়েল) লোহিত সাগরে সমর্থন না করার জন্য সতর্ক করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে: ইয়েমেন যে অবরোধ ইসরায়েলের ওপর আরোপ করেছে, তা ভাঙার যেকোনো প্রচেষ্টা – যে কোনো অজুহাত বা যুক্তি দেখিয়ে হোক না কেন – শত্রুর জন্য অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষা ফ্রন্ট হিসেবে গণ্য হবে এবং সানা সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবে।

আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়েদ আবদুল মালিক হুথি তার সাপ্তাহিক ভাষণে (গত বৃহস্পতিবার বিকালে) জোর দিয়ে বলেন, ইয়েমেন লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করবে। ইয়েমেনের অবস্থান হলো ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকা এবং সেই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করা, যে গোটা ইসলামি উম্মাহকে টার্গেট করেছে।

আনসারুল্লাহ সৌদি আরবের ব্রিটেনের সঙ্গে লোহিত সাগরে সহযোগিতার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি রিয়াদকে সতর্ক করে বলেছে: “আমি সৌদি শাসনব্যবস্থা ও অন্যদের পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনারা যেন দখলদার শাসনকে (ইসরায়েল) সামরিক সহায়তা দেওয়া এবং তাদের জাহাজ রক্ষায় জড়িয়ে না পড়েন। এটি লজ্জাজনক কাজ এবং আপনারা এতে সফল হবেন না। যতই চেষ্টা করুন না কেন, ইসরায়েলি জাহাজগুলোর নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পারবেন না।”

ইসরায়েলকে রক্ষায় সৌদি-ব্রিটিশ পরিকল্পনা

এ প্রেক্ষাপটে ইয়েমেনি সামরিক সূত্রগুলো আল-আখবার পত্রিকাকে জানিয়েছে, সৌদি আরবের আয়োজিত “লোহিত সাগর রক্ষা” শীর্ষক সম্মেলন, যেখানে ব্রিটেন ও লোহিত সাগর উপকূলবর্তী কয়েকটি দেশ অংশ নিচ্ছে, আসলে ইসরায়েলি জাহাজ রক্ষার জন্য—আন্তর্জাতিক নৌ-পরিবহনের জন্য নয়।

সূত্রগুলো জোর দিয়ে বলেছে: এই সম্মেলনের মাধ্যমে সৌদি আরব ইয়েমেনে তার অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে শক্তিশালী করতে চাইছে, যাতে তারা ইসরায়েলকে রক্ষার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। ইয়েমেনের দৃষ্টিতে এটি ইসরায়েলকে সহায়তা হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং সেই অনুযায়ী মোকাবিলা করা হবে।

তাদের মতে, এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে সেই ঘটনার পর, যখন গত মাসের শুরুতে ইয়েমেনি নৌবাহিনী লোহিত সাগরের উত্তর অংশে সৌদি উপকূলের কাছে কয়েকটি ইসরায়েলি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ইয়েমেনের সামুদ্রিক অভিযান সীমিত করা এবং একটি নতুন জোট গঠন করা—যাতে সৌদি আরব ও লোহিত সাগরসংলগ্ন অন্যান্য দেশ থাকবে—যা ইসরায়েলি জাহাজ বা ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগী জাহাজগুলোকে ইয়েমেনের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।

এই সূত্রগুলো আরও উল্লেখ করেছে যে, সানার সেনারা সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও সেগুলো পরিচালনা করেছে। এতে একাধিক দেশের ইসরায়েলের সঙ্গে যোগসাজশ এবং ইয়েমেনের আরোপিত অবরোধ এড়ানোর প্রচেষ্টা প্রকাশ পেয়েছে।

মার্কিন-সৌদি যৌথ মহড়া

এই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটছে যখন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের তত্ত্বাবধানে সৌদি-আমেরিকান যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মহড়ার মূল লক্ষ্য ছিল নতুন অস্ত্র ব্যবহার করে ইয়েমেনি ড্রোন প্রতিহত করা এবং সেগুলোকে ফিলিস্তিন অধিকৃত ভূখণ্ডে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া।

সম্প্রতি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ঘোষণা করেছে যে, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন মোকাবিলায় ইতিহাসের বৃহত্তম যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এই মহড়া সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হয়, যেখানে ৩০০-এর বেশি সেনা অংশ নেয় এবং সৌদির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংসে সক্ষম ২০টি উন্নত সিস্টেম ব্যবহার শেখানো হয়।

ইয়েমেনের অবস্থান

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষে ফ্রন্টে যোগ দেয় এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ও সামুদ্রিক-আকাশপথ অবরোধ শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ওপর দখলদারদের বাড়তি হত্যাযজ্ঞ এবং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণের পর ইয়েমেন তার সামরিক কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করেছে।

সংবাদ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইয়েমেন তার অভিযান বিস্তৃত করার চিন্তা করছে। এদিকে দুই সপ্তাহ আগে জানা যায়, সৌদি আরব সীমান্তবর্তী এলাকায় আকাশপথ টহল বৃদ্ধি করেছে এবং ইয়েমেনের সম্ভাব্য ইসরায়েলবিরোধী আক্রমণের মোকাবিলায় বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে। তবে সৌদির দাবি, এটি কেবল তার আকাশসীমা রক্ষার জন্য।

কিন্তু আল-আখবার–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক সামরিক সূত্র বলেছে, এই প্রস্তুতি আসলে সৌদি-আমেরিকান-ইসরায়েলি সহযোগিতার অংশ। সৌদি আরব অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে তার বিমানবাহিনীকে ইসরায়েলের সুরক্ষায় নিয়োজিত করেছে; অথচ একই দেশগুলো গত দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদারদের গণহত্যার ব্যাপারে নীরব থেকেছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা

এদিকে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ—কোনোটিই দখলদার শাসনের সেই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়নি, যেখানে ইয়েমেনি রাজনৈতিক ও বেসামরিক নেতাদের টার্গেট করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button