সমুদ্রলবণের ব্যবহার নিয়ে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের সতর্কতা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: অপরিশোধিত ও তথাকথিত ঐতিহ্যবাহী লবণ—যেগুলো ‘সমুদ্রলবণ’ বা ‘হ্রদের লবণ’ নামে বিক্রি হয়—স্বাস্থ্যঝুঁকির নীরব উৎস হয়ে উঠছে। খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন সতর্ক করে জানিয়েছে, এসব লবণ নিয়মিত ব্যবহারে শরীরে বিষক্রিয়া এমনকি ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের আশঙ্কা রয়েছে।
খাদ্য ও ওষুধ সংস্থার খাদ্য ও পানীয় পণ্যের মহাপরিচালক আব্দুল আজিম বেহফার অপরিশোধিত ও ঐতিহ্যবাহী লবণ ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন এবং এগুলোকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি জানান, যেসব লবণ ‘হ্রদের লবণ’ বা ‘সমুদ্রের লবণ’ নামে হারবাল দোকান ও অনানুষ্ঠানিক বাজারে বিক্রি হয়, সেগুলোর অধিকাংশই স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব লবণে সিসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু বিদ্যমান থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের ফলে ক্যানসার বা তীব্র বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে—সব ধরনের রঙিন, ঐতিহ্যবাহী এবং স্বাস্থ্যবিধিসম্মত পরিশোধন প্রক্রিয়াবিহীন লবণ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও ভক্ষণ অনুপযোগী, এমনকি সেগুলো যদি বাহ্যিকভাবে আকর্ষণীয় ও পেশাদার প্যাকেটেও মোড়ানো থাকে।
বেহফার জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, এই ধরনের লবণ প্রায়ই ‘প্রাকৃতিক’, ‘জৈব’ বা ‘চিকিৎসাগুণসম্পন্ন’—এমন অতিরঞ্জিত দাবির মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এসব দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক বা স্বাস্থ্যসম্মত ভিত্তি নেই। তাই এ ধরনের পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
তিনি আরও সতর্ক করেন যে, এই পণ্যগুলোর প্যাকেটে যদি তথাকথিত ‘অথেন্টিসিটি কোড’ বা শনাক্তকরণ নম্বরও লেখা থাকে, তবুও জালিয়াতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পণ্যের সত্যতা যাচাইয়ের সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো টি-ট্যাক (TTAC) সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোড যাচাই করা, যার ঠিকানা: **www.ttac.ir**। যদি যাচাইয়ের সময় কোনো তথ্য না পাওয়া যায় বা অবৈধ বার্তা প্রদর্শিত হয়, তবে সেই পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
খাদ্য ও পানীয় পণ্যের মহাপরিচালক স্পষ্টভাবে বলেন, মানুষের ভোগের জন্য একমাত্র নিরাপদ লবণ হলো স্বাস্থ্য অনুমোদনপ্রাপ্ত, পরিশোধিত ও আয়োডিনযুক্ত লবণ। অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে ঐতিহ্যবাহী বা অপরিশোধিত লবণ কেনা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।



