কুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

সমাজে নারীরা প্রভাবশালী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে; ইসলাম নারীর মর্যাদার উজ্জ্বল পথ নির্দেশ করেছে: আয়াতুল্লাহ সুবহানি

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী কেবল গৃহকেন্দ্রিক নয়; তিনি সমাজে জ্ঞান, নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নারীর মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণে ইসলামের শিক্ষা সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে, যা তাকে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের গঠন ও কল্যাণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।
ইরানের বিশিষ্ট ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ ও মারজায়ে তাকলীদ আয়াতুল্লাহিল উজমা জাফর সুবহানি ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে আয়োজিত প্রথম জাতীয় সম্মেলন “নারী ও পরিবার: ওহি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান”-এর উদ্দেশ্যে পাঠানো বার্তায় সম্মেলনকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং সমগ্র ইসলামি উম্মাহর জন্য অনুসরণযোগ্য এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কেরমানশাহ শহরের শাহিদ বেহেশতি বুলওয়ারে অবস্থিত কিশোর-কিশোরীদের জন্য ক্যান্টার ফর ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্টে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন, যেখানে আয়াতুল্লাহ সুবহানির বার্তা পাঠ করা হয়।
বার্তার উদ্ধৃতি অনুযায়ী, তিনি বলেছেন: “يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً” (সূরা নিসা, আয়াত ১) ইসলামের দৃষ্টিতে নারী এমন এক সত্তা, যিনি আল্লাহপ্রদত্ত মর্যাদা ও গুণে সমৃদ্ধ, সৃষ্টিতে পুরুষের সমমর্যাদাসম্পন্ন এবং মানবগঠনের মহৎ দায়িত্বে পুরুষের সহযাত্রী।
কুরআনুল কারিম ঘোষণা করেছে যে নারী ও পুরুষ উভয়ই একই “একক আত্মা” থেকে সৃষ্টি — “خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا”— যাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মানবতার মূল সত্তা, আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা এবং পরিপূর্ণতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
তিনি আরও বলেছেন, ইসলামের মহান শিক্ষা নারীর মর্যাদা ও সম্মানের একটি উজ্জ্বল ও সুশোভিত পথ নির্ধারণ করেছে। এই পথের সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হিসেবে নবী করীম (সা.)-এর কন্যা, বিশ্বনারী হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-কে ইসলাম পরিচয় করিয়েছে। তিনি এমন এক নারীর প্রতীক, যিনি ঈমান, জ্ঞান, পবিত্রতা, বুদ্ধিবৃত্তি ও দায়িত্ববোধে ছিলেন অনন্য। পর্দা ও পবিত্রতা রক্ষা করেও তিনি জ্ঞানের অন্বেষণ, ঈমানের দৃঢ়তা, বেলায়তের প্রতিরক্ষা এবং ঈমানদার প্রজন্মের লালন-শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর জীবন প্রমাণ করে দিয়েছে— একজন নারীও সমাজের হিদায়াত, জাগরণ ও মানবতার পুনর্গঠনের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেন।
অন্যদিকে, বস্তুবাদী মতবাদ ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি যখন ওহি, ফিতরাত ও বিশুদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তির পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হলো, তখন তারা নারীর মর্যাদা ও সত্তাকে কেবল ভোগ, প্রদর্শন ও বস্তুগত লাভের সীমায় আবদ্ধ করে ফেলেছে। এর ফলে পরিবার প্রতিষ্ঠান তার পবিত্রতা, স্থিতি ও আধ্যাত্মিক অর্থবোধ হারিয়েছে, আর সমাজে নৈতিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়েছে। আজকের পশ্চিমা সমাজে পরিবারের ভাঙন, একাকিত্ব ও নৈতিক অবক্ষয়ের যে দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা সেই বিপথগামী চিন্তারই করুণ পরিণতি।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী নারী কেবল গৃহকেন্দ্রিক সত্তা নন; বরং সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয়, প্রভাবশালী এবং ভূমিকা-অবদানশীল। নারী ও পুরুষ উভয়ে মিলেই সমাজের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেন এবং উভয়ের দায়িত্ব সমাজের কল্যাণে নিবেদিত থাকা। তবে তাদের কর্মক্ষেত্র, দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধের প্রকৃতি ভিন্ন। এই প্রাকৃতিক ও সামাজিক ভিন্নতাকে স্বীকার করা এবং তা যথাযথভাবে রক্ষা করা— নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সর্বোচ্চ সেবা, সম্মান ও প্রকৃত ন্যায়বিচারের প্রতিফলন।
বর্তমান যুগে “নারী ও পরিবার” বিষয়ক নানা প্রশ্ন, বিভ্রান্তি ও মনগড়া তত্ত্বের স্রোতের মুখে নারী ও পরিবারের পরিচয়, অবস্থান ও মর্যাদা বিষয়ে কুরআন ও বিশুদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিতে ইসলামি সমাজ  আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় নতুনভাবে অনেক বেশি চিন্তাশীল পর্যালোচনার প্রয়োজন বোধ করছে।
এই প্রেক্ষাপটে, কেরমানশাহের মতো জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ শহরে “নারী ও পরিবার: ওহি ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান” জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন নিঃসন্দেহে এক প্রশংসনীয় ও আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। গভীর চিন্তাশীল সংলাপ ও গবেষণামূলক আলোচনা যদি ওহি ও যুক্তির ভিত্তিতে সংগঠিত হয়, তবে তা সমাজের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে এবং সমগ্র ইসলামি উম্মাহর জন্য অনুসরণযোগ্য এক আদর্শ স্থাপন করতে পারে।
তিনি সকল চিন্তাবিদ, গবেষক এবং বিশেষত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদুষী নারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, সম্মেলনের ফলাফল ইসলামি সমাজের জ্ঞানচর্চা, সংস্কৃতি, নৈতিকতা ও পারিবারিক জীবনে সুফল বয়ে আনবে এবং মুসলিম নারীর মর্যাদা ও পরিবারের পবিত্র ভিত্তি দৃঢ় ও স্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেষে তিনি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন— এই উদ্যোগের সংশ্লিষ্ট সকলকে ক্রমবর্ধমান সাফল্য ও তাওফিক দান করুন এবং সবাইকে কুরআন, আহলে বাইত (আ.) ও পরিবারের মূল্যবোধের সেবায় নিয়োজিত রাখুন। আয়াতুল্লাহুল উজমা জাফর সুবহানি হাওজায়ে ইলমিয়া, কোম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button