সফল সমাজের ভিত্তি: হিজাব ও নৈতিকতার শুরু হালাল রিজিক থেকে
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: সমাজে হিজাব ও নৈতিকতা যদি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তার মূল সূচনা হওয়া উচিত মানুষের “খাবার ও অর্জিত সম্পদের পবিত্রতা” থেকে। আর্থিক অবক্ষয়, হারাম উপার্জন ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতা কখনো কখনো সমাজকে নৈতিকভাবে ভেঙে দিতে পারে। হিজাবের দুর্বলতা বা প্রকাশ্য অনৈতিকতা কেবল প্রভাব, মূল কারণ নয়।
যখন মানুষের জীবনে গাফিলতির ছায়া নেমে আসে, তখন সে ভুলে যায় এক অতল পবিত্র দায়িত্বের গভীরতা ও মর্যাদা। আত্মিক প্রস্তুতির আলো নিভে গেলে এবং নৈতিক সচেতনতার দ্বার রুদ্ধ হলে, সে সন্তানের আগমনের মতো এক মহৎ কর্মে অগ্রসর হয় নিছক প্রবৃত্তির তাড়নায়। এই অবহেলার ফাঁকেই শয়তান তার ছায়া বিস্তার করে—নির্বোধ নর-নারীর অজ্ঞাতসারে সে নেমে আসে মানব-নির্মাণের সূক্ষ্মতম স্তরে, জমাট রক্তর গভীরে। সেখানে সে বপন করে অশুভতার বীজ, যা ভবিষ্যতের হৃদয়ে অজান্তেই অন্ধকারের ছায়া হয়ে জন্ম নেয়।
নবীজী (সা.)-এর একটি বাণী বলে— «أَحَبُّ الْعَفَافِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى عَفَافُ الْبَطْنِ وَ الْفَرْجِ»
অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পবিত্রতা হল পেট ও দেহের শুদ্ধতা। এই বাণী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, অনৈতিকতার সূচনা হয় চোখের দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা বা হিজাবের দুর্বলতা থেকে নয়, বরং সেই খাবার ও সম্পদ থেকে যা হারাম বা সন্দেহজনক উপায়ে অর্জিত হয়। পেটের অশুদ্ধতা হৃদয়কে অন্ধ করে দেয় এবং মানুষের আত্মাকে আল্লাহর সত্য উপলব্ধি থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
ইতিহাসও এ সত্যের সাক্ষী। যখন মানুষের পেট হারামের দ্বারা ভরপুর হয়, তখন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মাথা শিকারে গিয়েছিল। এটি দেখায় যে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নৈতিকতা বা চেহারার সংস্কার যথেষ্ট নয়—সত্যিকার সংস্কার আসে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা এবং অর্থনৈতিক সততা থেকে।
আজকের সমাজেও যে কোনো ধরনের আর্থিক অব্যবস্থা—যেমন রিবা, ঘুষ, কম মাপের বাণিজ্য, তহবিলের অপচয়—সমাজে সাধারণ অনৈতিকতার পথ প্রশস্ত করে। পেট হারামের দ্বারা পূর্ণ হলে, মানুষের মনে ফাহশা ও অবাধ্যতার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, হিজাব বা পোশাকের নিয়ন্ত্রণ কেবল বাহ্যিক চিহ্ন; মূল কারণ হলো পেটের পবিত্রতা হারানো।
ইমাম বাকের (আ.) বলেন— «أَيُّ الِاجْتِهَادِ أَفْضَلُ مِنْ عِفَّةِ الْبَطْنِ وَ الْفَرْجِ»
অর্থাৎ, পেট ও দেহের পবিত্রতা অর্জনের চেয়ে কোনো প্রচেষ্টা ভালো নয়। যে কোনো শিক্ষার সূচনা হওয়া উচিত হালাল খাবার এবং পবিত্র রিজিক থেকে। পরিবার, সমাজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেভাবেই শিক্ষাদান করুক না কেন, হালাল ও হারাম উপার্জনের প্রতি সচেতনতা ছাড়া নৈতিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হতে পারে না।
এজন্য, সমাজের সংস্কার প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া উচিত—
১.হালাল-হারামের প্রতি সচেতনতা: খাদ্য, অর্থ ও সম্পদ শুদ্ধ রাখা।
২.দায়িত্বশীল নেতৃত্ব: রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যদি রিবা, ঘুষ বা তহবিলের অপচয়ে উদাসীন থাকেন, তবে সমাজের নৈতিক ভিত্তি ক্ষয় হবে।
৩.ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব: মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক নৈতিকতা ও সামাজিক নৈতিকতার সংযোগ জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।
উপসংহার:
যে সমাজে পেট ও দেহের পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ থাকে, সে সমাজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিজাব, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়। হালাল উপার্জন, নৈতিক খাদ্যাভ্যাস এবং সততার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা পরিবারই পারে এমন সমাজের নির্মাণ করতে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পবিত্রতা হল পেট ও দেহের শুদ্ধতা, এবং যে কোনো সংস্কারের শুরু হওয়া উচিত পবিত্র রিজিক থেকে।



