সফলতা ও শান্তির মূল চাবি — সবর
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মানুষ নানা উপায়ে জীবনের সুখ ও সাফল্য খোঁজে—কেউ সম্পদে, কেউ সম্পর্কের স্থায়িত্বে, কেউ ক্ষমতা কিংবা আনন্দে। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের প্রকৃত প্রশান্তি ও সফলতার একমাত্র নিশ্চিত সূত্র হলো সবর, অর্থাৎ ধৈর্য ও আত্মসংযম। নামাজ হোক, রোজা, গুনাহ থেকে বিরত থাকা হোক কিংবা দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন—প্রতিটি ক্ষেত্রে সবরই মানুষকে ভেতর থেকে দৃঢ় করে, ঈমানকে পরিপূর্ণ করে এবং জীবনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রয়াত আলেম ও নৈতিক শিক্ষার মহান শিক্ষক আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খুশওয়াক্ত এক নৈতিক পাঠে “জীবনের শান্তি ও সফলতার চাবিকাঠি” প্রসঙ্গে যে বয়ান প্রদান করেছিলেন, তার মূল বক্তব্য নিম্নরূপ:
بسم الله الرحمن الرحیم. سلام علیکم بما صبرتم
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম — “সালামুন আলাইকম বিমা সাবারতুম”
(“তোমরা যে সবর করেছো, তার বিনিময়েই তোমাদের প্রতি শান্তি ও নিরাপত্তার সালাম বর্ষিত হোক।”)
ফেরেশতারা দুনিয়ায় মানুষের সামনে দৃশ্যমান হন না; তাই তাদের সালাম দুনিয়ায় অনুভূত হয় না। কিন্তু জান্নাতে তারা দৃশ্যমান হবেন এবং প্রতিটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করে জান্নাতবাসীদের উদ্দেশ্যে বলবেন:
তোমাদের প্রতি আমাদের এই সালাম, এই নিরাপত্তা, এই দোয়া—সবই তোমাদের সেই ধৈর্যের জন্য, যা তোমরা দুনিয়ায় প্রদর্শন করেছিলে।
সবর ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়
১. ফজরের সময় ঘুম ভেঙে নামাজ পড়তে ধৈর্য লাগে।
২. প্রচণ্ড গরমে রোজা রাখতে ধৈর্য লাগে।
৩. দীর্ঘ যাত্রা, কষ্টকর পথ পাড়ি দেওয়া—এসবও সবরের দাবি রাখে।
৪. আল্লাহর প্রত্যেক আদেশ পালন ও তাঁর নিষেধ থেকে বিরত থাকা—সবই সবরের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
সবরই হলো আনুগত্য ও ঈমানের ভিত্তি।
কিন্তু সবরের স্বভাবগত রূপ তিক্ত। মানুষ স্বাভাবিকভাবে যা চায় তাই করতে চায়, অথচ সবর বলে—“না, নিজেকে আটকে রাখো।” এটাই আল্লাহর পরীক্ষা।
অনেকেই তিক্ততার কারণে ধৈর্য ধরে রাখতে পারে না এবং গুনাহে লিপ্ত হয়। তাই বিশেষ করে গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে সবর ছাড়া কোনো পথ নেই।
দাম্পত্য জীবনেও সবর অপরিহার্য
আল্লাহ বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন—কারণ অবিবাহিত থাকলে গুনাহে পতিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু বিবাহের পরও সবর দরকার, কারণ স্ত্রী-স্বামীর রুচি, মানসিকতা, লক্ষ্য—সব এক হয় না। মতবিরোধ হবেই।
প্রথম দিনেই শুরু হতে পারে:
১- খাবার তাড়াতাড়ি চাই
২- কেন দেরি করেছো?
৩- আমি এখনই বিশ্রাম চাই —
যদি সবর না থাকে তবে ঝগড়া, বিবাদ বাড়বে, সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সংসার ভেঙে যাবে, আল্লাহও অসন্তুষ্ট হবেন।
কীভাবে সবরকে শক্তিশালী করা যায়?
সবরকে শক্তিশালী করার উপায়—আবার সবরই।
১. আগে ওয়াজিব কাজগুলো দিয়ে শুরু করতে হবে।
২. ওয়াজিব কাজ করতে গিয়ে ধৈর্য প্রদর্শন করলে ধীরে ধীরে সবর বাড়তে থাকবে।
এক সময় মানুষ অনুভব করবে—যে কাজ শুরুতে অত্যন্ত ভারী ও তিক্ত মনে হতো, এখন তা খুব সহজে সম্পন্ন হয়।
নিয়মিত চর্চাই ধৈর্য তৈরি করে, আর ধৈর্য তৈরি করে শক্তিশালী ঈমান ও স্থায়ী প্রশান্তি।
উপসংহার:
সবর শুধু একটি গুণ নয় — এটি জীবন পরিচালনার ভিত্তি, ঈমানের সিঁড়ি এবং জান্নাতের আমন্ত্রণপত্র।



