ধর্ম ও বিশ্বাসSlider

শিয়া ও ‍সুন্নি মাজহাবের কিতাবে শবেবরাত

প্রিয় নবী ও তাঁর আহলে বাইত এ পবিত্র রাতে যা করতেন

শবেবরাত

শিয়া ও ‍সুন্নি মাজহাবের কিতাবে শবেবরাত

জান্নাতুল বাকী গোরস্থান যিয়ারত:

১৫ শা’বানের রজনী ছিল হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আহলুল বাইতের (প্রিয় নবীর বংশধর) কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রজনী। এ রাতে মহানবী (সা.) জান্নাতুল বাকী গোরস্থানে গিয়ে সেখানে কবরে শায়িত ব্যক্তিদের যিয়ারত ও তাদের জন্য দু’আ ও মাগফিরাত কামনা করেছেন। যেমন: বাইহাকীর একটি রেওয়ায়তে নবীপত্নি হযরত আয়েশা (রা.) বলেন: আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রবেশ করে স্বীয় বস্ত্রদ্বয় পুরোপুরি খুলে ফেলতে না ফেলতেই উঠে দাঁড়িয়ে আবার তা পরিধান করলেন (ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য)। আমার খুব ঈর্ষা হলো এতে। আমি ভাবলাম যে তিনি (সা.) আমার কোনো সতীনের কাছে গেছেন। তাই আমিও বের হয়ে তাঁকে (সা.) অনুসরণ করতে লাগলাম এবং তাঁকে (সা.) বাকীউল্ গার্ক্বাদে পেলাম যে তিনি মু’মিন নরনারী ও শহীদদের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করছেন। —আল-হাদীস ;

আর এতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, আর এটা ছিল ১৫ শা’বানের রাতের ঘটনা।

(দ্রঃ আল্লামা আস-সামহূদী নূরুদ্দীন আলী ইবনে আহমাদ প্রণীত ওয়াফুল ওয়াফা বিআখবারি দারিল্ মুস্তাফা, খ:৩, পৃ:৭৯, মুআসসাসাতুত্ তারীখ আল-আরাবী, বৈরূত, লেবানন, ১ম সংস্করণ,১৪৩০হি.)।

জান্নাতুল বাকী
শবেবরাত

মহানবী (সা.) বলেছেন:

«مَن أحيا لَيلةَ العِيدِ و لَيلةَ النِّصفِ مِن شَعبانَ ، لَم يَمُتْ قَلبُهُ يَومَ تَموتُ القُلوبُ»

যে ব্যক্তি ঈদের রাত ও ১৫ শা’বানের রাত জাগরণ করবে (ইবাদত-বন্দেগী ,দুআ, যিকির ও যিয়ারত করে) তার ক্বালব (হৃদয়) যে দিন হৃদয় সমূহ মরে যাবে সে দিন মৃত্যু বরণ করবে না।

( দ্রঃ হুর আল-আমিলী প্রণীত ওয়াসাইলুশ শী’আ, খন্ড:৭, হাদীস নং ৯৯০৩)

১৫ শা’বানের রাত ক্ষমা ও মাগফেরাতের মূহুর্ত:

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন: ১৫ শা’বানের রাতে-যা সমাগত হয়েছে-তোমরা জেগে থাকবে এবং ১৫ শা’বানের দিবসে রোযা রাখবে। কারণ, মহান আল্লাহ সূর্যাস্ত থেকে ফজরের উদয় পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন: কেউ কি আছে যাকে আমি ক্ষমা করব? রিযিক ও রুযী (জীবিকা) সন্ধানকারী আছে কি যাকে আমি রিযিক ও রুযী দিব? কেউ কি অসুস্থ আছে যাকে আমি শিফা (আরোগ্য) দিব? (দ্রঃ সুনান-ই ইবনে মাজা,খ:২,পৃ:৫০৭-৫০৮,সা’লাবী,আল-কাশফ ওয়াল বায়ান,খ:৮,পৃ:৩৪৯)

মহানবী (সা.) বলেছেন: ১৫ শা’বান রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সকল বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং সবার গুনাহ ঢেকে দেন (ক্ষমা করে দেন) তবে দুই ধরনের ব্যক্তি ব্যতীত:  ১.যে ব্যক্তি তার নিজ বন্ধুর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে সে এবং (২) যে ব্যক্তি ( অন্যায়ভাবে কাউকে) হত্যা করেছে সে ব্যতীত (এ দুই ধরনের ব্যক্তি ক্ষমা পাবে না)।

(দ্রঃ: মুসনাদুল ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খ:১১,পৃ:২১৬-২১৭)

ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: যখন ১৫ শাবান সমাগত হয় তখন আসমান হতে এক আহ্বানকারী ঘোষণা করতে থাকে: হে হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারতকারীগণ! তোমরা সচেতন হও ও জেনে রাখ; আর তোমরা ( হুসাইনের মাযার যিয়ারত শেষে) নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাও। তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের মহান প্রভু আল্লাহ এবং রাসূলে আকরামের (সা.) কাছে তোমাদের সওয়াব সংরক্ষিত থাকবে (দ্রঃ আল্লামা কুলাইনী সংকলিত আল-কাফী,খ:৪,পৃ:৫৮৯)।

সুতরাং শিয়া-সুন্নী গ্রন্থসমূহের বেশ কিছু হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে ১৫ শা’বানের রাত মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইত (আ.)-এর কাছে শবে কদরের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রজনী। অতএব শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে গোটা মুসলিম উম্মাহর উচিত এ রজনী যথাযথ ভক্তি, শ্রদ্ধা,মর্যাদা ও ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালন ও উদযাপন করা। আর এতেই রয়েছে দিয়ানত (ধার্মিকতা) ও দ্বীনদারী। আর যারা বলে যে এ রাতের কোনো গুরুত্ব নেই, এ রাতে  ইবাদত-বন্দেগী এবং বিভিন্ন ধরনের হালুয়া-রুটি, মিষ্টান্ন, শরবত ও পানীয় পরিবেশন করে মু’মিনদের ইত’আম্ (আপ্যায়ন) করা বিদ’আত ও হারাম  আসলে তারাই এ কথা বলে মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধাচরণ এবং বিদ’আত ও হারামেই লিপ্ত আছে। এ সব পথভ্রষ্ট বিদ’আত পন্থীদের কথা শোনা অনুচিত। (পর্ব ২ সমাপ্ত)

সংগ্রহ ও অনুবাদ: ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক, মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

প্রথম পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

https://www.facebook.com/share/p/15vhTGDJye/

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button