জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

শয়তান প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব পথে বিভ্রান্ত করে: আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদী আমুলী

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদী আমুলি (দা.বা.) বলেন, নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.)-এর বাণী অনুযায়ী নিয়তই হলো আমলের প্রাণ; আর এই নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ অনেকেই বাহ্যিকভাবে আমল সম্পাদন করতে পারে, কিন্তু সঠিক ও খাঁটি নিয়ত সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: এক বক্তব্যে তিনি “নিয়তের মূল্য ও তার কঠিনতা” বিষয়ে বলেন— আহলে বাইতের মাসুম ইমামগণ (আ.) বলেছেন,

 نِيَّةُ الْمُؤْمِنِ خَيْرٌ مِنْ عَمَلِهِ

“মুমিনের নিয়ত তার আমলের চেয়েও উত্তম”
এবং আরও বলেছেন,

أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ أَحْمَزُهَا

“সর্বোত্তম আমল হলো সবচেয়ে কষ্টসাধ্য আমল”

তিনি বলেন, নিয়তই আমলের আত্মা। কাজটি বাহ্যিকভাবে সঠিক হলেও নিয়ত যদি বিশুদ্ধ না হয়, তবে সেই আমলের প্রকৃত মূল্য থাকে না। প্রথমত, কোনো অপছন্দনীয় বা গোনাহের কাজকে কখনোই

قُرْبَةً إِلَى اللَّهِ

“আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে”— করা যায় না।”

অতএব যে কাজটি করা হচ্ছে, তা এমন হতে হবে যা মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার যোগ্য—অর্থাৎ তার মধ্যে حُسْنُ الْفِعْلِ (হুসনে ফে‘লি) থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সেই কাজটি করতে হবে সৎ উদ্দেশ্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে—অর্থাৎ حُسْنُ الْفَاعِلِ (হুসনে ফা‘ইলি) থাকতে হবে।

এই দুই শর্ত পূরণ হলে, যখন কোনো আমল আত্মপ্রদর্শন, অহংকার ও সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকে, তখন সেই আমলের নিয়তই আমলের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠে। আর এ স্তরে পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন বলেই নিয়তকে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কেউ যখন একটি বই রচনা করে, স্বাভাবিকভাবেই তার ইচ্ছা থাকে বইয়ের মলাটে নিজের নাম প্রকাশিত হোক। কিংবা কেউ মসজিদ বা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করলে চায় তার নাম ফলকে লেখা থাকুক বা মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হোক। আবার কেউ কেউ চান তাদের নাম প্রকাশ না হোক, যাতে লোকেরা বলে— তিনি এতটাই উন্নত স্তরে পৌঁছেছেন যে নিজের নাম প্রচার করতেও রাজি হননি। অথচ এটিও এক ধরনের সূক্ষ্ম আত্মপ্রদর্শন বা রিয়া।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কখনো কখনো মানুষ রিয়া করে অথচ নিজেই তা উপলব্ধি করতে পারে না। এটি এক ধরনের গোপন ও সূক্ষ্ম রিয়া, যা সাধারণত মানুষের নজরে আসে না। আর এ কারণেই—

إِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْتِي الإِنْسَانَ مِنْ طَرِيقِهِ

“নিশ্চয়ই শয়তান প্রত্যেক মানুষকে তার নিজস্ব পথ (অর্থাৎ যে পথে যার দূর্বলতা ও ঘাটতি রয়েছে, তাকে সে পথ) দিয়েই প্রলুব্ধ করে”

আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলি আরও বলেন, কেউ কেউ এ আশঙ্কায় সৎকাজ পরিত্যাগ করে যে, মানুষ হয়তো বলবে— অমুক ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজটি করছে। বাস্তবে এ ক্ষেত্রেও মানুষের কথাই সৎকাজ ত্যাগের প্রেরণায় পরিণত হয়, যা নিজেই এক ধরনের সূক্ষ্ম পরীক্ষার নাম।

সূত্র: مراحل الأخلاق في القرآن (মারাহিলুল আখলাক ফিল কুরআন), পৃষ্ঠা ২৪৫

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button