Sliderধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

রোজাদার ব্যক্তি কি প্রেসারের ওষুধ খেতে পারবেন?

মাহে রমজান

রোজাদার ব্যক্তি কি প্রেসারের ওষুধ খেতে পারবেন?
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী (হাফি.) রোজাদার ব্যক্তি উচ্চরক্ত চাপের ওষুধ খাওয়ার বিষয়ে বলেছেন যে, এতে কোনো “সমস্যা নেই”, তবে তার রোজা ভঙ্গ বা বাতিল হয়ে যাবে।
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর দপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ও প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রোজা ভঙ্গকারী বিষয় সমূহ অর্থাৎ যেসব কাজ করলে রোজা নষ্ট হয়ে যায়, তার মধ্যে একটি হলো খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা। যদি রোজাদার ব্যক্তি প্রেসার বা রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া অত্যাবশ্যক মনে করেন (অর্থাৎ তৎক্ষনাৎভাবে ওষুধ না খেলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে মনে করেন), তাহলে সে তা সেবন করতে পারেন, তবে এতে তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে (কারণ ওষুধ খাওয়াকেও খাবার গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়)।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার একজন মুকাল্লিদ (অনুসারী) প্রশ্ন করেন, “রোজা থাকা অবস্থায় রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া জায়েজ কি না?” এর জবাবে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, “যদি রোজা রেখে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ খাওয়া অত্যাবশ্যক হয়, তবে তা গ্রহণ করা যায়েজ। কিন্তু এতে রোজা ভঙ্গ বা বাতিল হয়ে যাবে।”

রোজাদারের খাবার ও পানীয় গ্রহণ সংক্রান্ত কয়েকটি মাসআলা নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১. যদি রোজাদার ইচ্ছাকৃতভাবে ও জেনে বুঝে কিছু খায় বা পান করে, তবে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তা খাদ্য বা পানীয় হোক, অথবা অখাদ্য কোনো কিছু (যেমন: কাগজ, কাপড় ইত্যাদি) হোক। পরিমাণ কম বা বেশি যাই হোক, এমনকি সামান্য পানির কণা বা ছোট্ট খাবারের টুকরো হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
২. যদি কোনো খাদ্যের অংশ দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকে এবং রোজাদার ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেলে, তবে তার রোজা বাতিল হবে। যদি সে না অজ্ঞতা বশতঃ দাঁতের ফাঁকে খাদ্য রয়ে গেছে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেলে, তবে রোজা ভঙ্গ বা বাতিল হবে না।
৩. ভুলে কিছু খেলে বা পান করলে রোজা ভাঙবে না। এটা ফরজ ও নফল রোজা উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৪. নিজের লা লা গিলে ফেলা রোজা ভঙ্গ বা বাতিল করবে না। [তবে, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে লা লা মুখে জমিয়ে রেখে গিলে ফেললে রোজা বাতিল হয়ে যাবে!]
৫. সতর্কতামূলকভাবে অর্থাৎ জেনে-বুঝে রোজাদার শক্তিবর্ধক বা পুষ্টিকর ইনজেকশন শিরায় প্রবেশ করানো এবং স্যালাইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে। তবে পেশীতে ইনজেকশন বা অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য ইনজেকশন এবং ক্ষত বা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে ওষুধ প্রয়োগ করাতে কোনো সমস্যা নেই, অর্থাৎ তা জায়েজ।
৬. রোজাদারের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব যে- সে নাক বা জিহ্বার নিচে শোষিত নেশাদার বস্তু গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে।
৭. যদি কেউ সেহরি খাওয়ার সময় বুঝতে পারে যে ফজরের সময় হয়ে গেছে, তবে তাকে মুখের খাবার ফেলে দিতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মুখের খাবার খেয়ে ফেলে, তবে রোজা বাতিল হয়ে যাবে।
৮. নাকের সর্দি জণিত কফ্ ও বুকের নির্গত স্লেষ্মা (কফ) মুখের মধ্যে না আসা পর্যন্ত গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে যদি তা মুখের মধ্যে চলে আসে, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব যে, তা গিলে ফেলা যাবে না (অর্থাৎ গিলে ফেললে রোজা বাতিল হয়ে যাবে)।
৯. মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে তা গিলে ফেলা না পর্যন্ত রোজা ভঙ্গ হয় না এবং যদি তা লা লায় মিশে যায় (নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়), তবে তা পাক বলে বিবেচিত হয় এবং তা গিলে ফেলতে কোনো সমস্যা নেই এবং এতে রোজা ভঙ্গ হবে না। আর যদি মুখের লা লার সাথে রক্ত মিশে যাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ থাকে (কেবলই সন্দেহ, নিশ্চয়তা নয়), তবে তা গিলে ফেলতে কোনো সমস্যা নেই এবং রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। যদিও মুখ থেকে রক্ত বের হওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে তা গলায় পৌঁছানো থেকে বিরত থাকা সতর্তকামূলক ওয়াজিব।
মিডিয়া মিহির/ধর্ম ও বিশ্বাস/রাসেল আহমেদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button