রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে ইমাম আলী(আ.)এর প্রজ্ঞামূলক পরামর্শ
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইমাম আলীর প্রজ্ঞামূলক বাণী আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন, বহু রোগের একটি নির্দিষ্ট সময়কাল থাকে, যা শেষ হলে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই তা দূর হয়ে যায়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও এই সত্যকে স্বীকার করেছে—অর্থাৎ ধৈর্য, সংযম ও শরীরকে সময় দেওয়া সুস্থতার পথে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।
শীতের আগমনে দেশ যখন ভয়াবহ বায়ুদূষণের সংকটে জর্জরিত, তখন জনস্বাস্থ্য সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভিড় জমেছে শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও দূষণজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণ, শিশু ও দুর্বল স্বাস্থ্যসম্পন্ন মানুষদের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মানসম্মত মাস্ক ব্যবহার, গরম তরল পান করা এবং দূষিত এলাকায় অযথা না যাওয়া।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ইমাম আলী (আ.)-র চিরন্তন বাণী নতুন করে অর্থবহ হয়ে ওঠে। তিনি বলেছেন: «إِمْشِ بِدَائِکَ، مَا مَشَى بِک» অর্থাৎ—“তোমার রোগ যতদিন তোমার সঙ্গে চলতে পারে, ততদিন তার সঙ্গে সহনশীলভাবে চল।
এই বাণীর গভীর তাৎপর্য হলো—অসুস্থতা যতক্ষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, ততক্ষণ ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে শরীরকে সময় দেওয়া উচিত, যাতে প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করতে পারে। এতে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমে, আর রোগীও নিজের সুস্থতার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হয়।
ইবনে মাইছাম বাহরানি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন: যতক্ষণ রোগ মানুষকে সম্পূর্ণ অক্ষম করে না, ততক্ষণ তাকে সুস্থ মানুষের মতো সক্রিয় থাকতে হবে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় রোগকে নিজেই দূর করতে পারে, যা অতিরিক্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করে।
ইমাম কাজিম(আ.)-এর বাণীতেও একই শিক্ষা পাওয়া যায়: «لَیْسَ مِنْ دَوَاء إِلاَّ وَهُوَ یُهَیِّجُ دَاءً» অর্থাৎ—“কোনো ওষুধ নেই যা অন্তত একটি নতুন অসুখকে উদ্দীপিত করে না।” তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ রোগ চাপ সৃষ্টি না করে, ততক্ষণ চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাওয়া উচিত নয়।
ইমাম আলী (আ.)-এর আরেকটি বাণীও একই বার্তা দেয়: «لاَ تَضْطَجِعْ مَا اسْتَطَعْتَ الْقِیَامَ مَعَ الْعِلَّةِ» অর্থাৎ—“যতক্ষণ তুমি অসুস্থ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারো, ততক্ষণ বিছানায় শুয়ে পড়ো না।
এই শিক্ষাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে চিকিৎসা জরুরি হলেও তাড়াহুড়া নয়। শরীরকে সময় দেওয়া, ধৈর্য রাখা এবং প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখা—এগুলোই সুস্থতার পথে সবচেয়ে প্রজ্ঞামূলক পদক্ষেপ। একই সঙ্গে এটি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমায় এবং রোগীকে মানসিকভাবে দৃঢ় রাখে।



