ধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

রাসুলুল্লাহর (স.) জন্ম

মোঃ কামরুল হাসান | 25 আগষ্ট 2025

রাসুলুল্লাহর (স.) জন্ম:-

 

হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাস রবিউল আওয়াল। যে মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রিয়নবী (স.)-এর জন্ম ও মৃত্যুর ইতিহাস। এজন্য মাসটি মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত। ‘রবিউল আউয়াল’ শব্দের অর্থ বসন্তের শুরু বা প্রথম বসন্ত।

 

মহনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ভূমিষ্ঠ হন। আরবি হিজরি সাল অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। অধিকাংশ হাদিসবিশারদ রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন বলে মত প্রকাশ করেছেন।

 

মহানবী (সা.)-এর জীবনী লেখকদের মধ্যে ইবনে ইসহাক প্রথম সারির জীবনীকার। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) হাতি বাহিনীর ঘটনার বছর ১২ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম, খণ্ড-১, পৃ. ১৫৮)

তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন প্রণেতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আরো কিছু অভিমত উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, এ বিষয়ে সবাই একমত যে নবী করিম (সা.)-এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার দিন হয়েছিল। কিন্তু তারিখ নির্ধারণে চারটি বর্ণনা প্রসিদ্ধ আছে—২, ৮, ১০ ও ১২ রবিউল আউয়াল। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে ১২ তারিখ। তারিখে ইবনে আছির’ গ্রন্থে এ তারিখই গ্রহণ করা হয়েছে।

 

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম তারিখ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দিন হিসেবে সোমবার সম্পর্কে কোনো মতভেদ নেই। কারণ জীবনচরিত রচয়িতারা একমত যে রবিউল আউয়াল মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে সোমবার দিন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম। (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)

 

তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমিনা। মুহাম্মাদের জন্মের পূর্বেই তার পিতা এবং ছয় বছর বয়সে তার মাতা মৃত্যুবরণ করেন। এতিম মুহাম্মাদ পরবর্তী দুই বছর তার দাদা আবদুল মুত্তালিবের কাছে লালিত পালিত হন। দাদার মৃত্যুর পরে তার চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হন। তিনি শৈশবে মেষপালক ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাণিজ্যে নিযুক্ত হন। তিনি ২৫ বছর বয়সে খাদিজাকে বিয়ে করেন। ইসলামের আগমনের পূর্ব থেকেই তিনি মূর্তি পূজা এবং পৌত্তলিক রীতিনীতি বর্জন করে চলতেন। নবুয়তের পূর্ববর্তী জীবনে তিনি মাঝে মাঝে হেরা নামক পর্বতের গুহায় রাত্রি যাপন করতেন এবং একাগ্রচিত্তে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

 

মুহাম্মাদ নামের বাংলা অর্থ হলো “প্রশংসনীয়”। কুরআনে এই নামটি মোট চারবার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচলিত ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, মুহাম্মাদ ইব্রাহিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাইলের বংশধর। তার বংশপরম্পরা আদনানি আরবদের মধ্য দিয়ে কুরাইশ গোত্রে পৌঁছায় এবং নির্দিষ্টভাবে সেই গোত্রের হাশিমী শাখা থেকে তিনি আগত। মুহাম্মাদের পূর্বপুরুষদের বংশক্রম ধারাবাহিকভাবে: মুহাম্মাদ, আব্দুল্লাহ, আব্দুল মুত্তালিব (শায়বা), হাশিম, আবদ মানাফ (মুগিরা), কুসাই, কিলাব, মুররাহ, কা’ব, লুয়াই, গালিব, ফিহর, মালিক, নাদর (কুরাইশ), কিনানাহ (কিনানা উপজাতি), হুজাইমা, মুদরিকা (আমির), ইলিয়াস, মুদার, নিজার, মা’আদ, আদনান।

 

কিছু হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মুহাম্মাদ নিজেই তার বংশধারাকে ইব্রাহিম নবির সাথে সংযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন,

“আল্লাহ ইব্রাহিমের সন্তানাদির মধ্য থেকে ইসমাইলকে, ইসমাইলের সন্তানাদির মধ্যে থেকে কিনানাহকে মনোনীত করেন। কিনানাহর বংশধারার মধ্য থেকে কুরাইশকে, কুরাইশ থেকে বনু হাশিমকে এবং বনু হাশিম থেকে আমাকে মনোনীত করেন।” — সহিহ-ই মুসলিম, খণ্ড ৭, পৃ. ৫৮

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button