যে ৫টি পদক্ষেপ কন্যা সন্তানদের ’শৈশব” থেকেই হিজাবের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে
মানব শিশু জন্মের পর থেকে কোন ধর্মমত বা বিশেষ কোন কৃষ্টিকালচার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। শিশুর মন হলো সাদা কাগজের মতো। সে যা কিছুই দেখবে তাই তার স্মৃতিপটে অঙ্কিত হবে। শিশুদের এই অবস্থাকে সামনে রেখে নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন-
كلُّ مولودٍ يولَدُ على الفطرةِ فأبواه يُهوِّدانِه أو يُنصِّرانِه أو يُمجِّسانِه
অর্থাৎঃ “প্রত্যক নবজাতক শিশুই জন্মগ্রহণ করে সহজাত প্রকৃতি অর্থাৎ ফিতরতের উপর । অত:পর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী অথবা নাসারা বা মাজুসীতে পরিণত করে।”
তাই, শিশুরা যেই পরিবেশে বসবাস করছে সেই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার পরিজন নিজেরা হিজাব ও পবিত্রতার আবহ সৃষ্টি করলে সেই আবহেই তাদের শিশু সন্তানরা গড়ে উঠতে শুরু করবে।
কিভাবে আপনি আপনার কন্যা সন্তানকে ইসলামী আবহ তথা হিজাবের পরিবেশের সাথে পরিচিত করাবেন এবং হিজাবের প্রতি আগ্রহী করে তুলবেন; আজকের এই নিবন্ধে দর্শক মহলের জন্য আমাদের এই সামান্য উপহার।
“হতে পারে শিশুটি বড় হওয়ার পর একটি অশান্ত পরিবেশে পড়ে, কিন্তু যেহেতু তার মধ্যে হিজাব ও পবিত্রতার মূলনীতি গেঁথে দেওয়া হয়েছে, অতএব যা কিছু ঘটুক না কেন হিজাব তাদের মানসপটে অঙ্কিত থাকার কারণে এবং এই বিষয়ক সঠিক ও বেঠিক জ্ঞান থাকায় কোন ভাবেই তাকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু নিত্য নতুন বিষয় নিত্য নতুন চাহিদা তাদেরকে প্রতিনিয়ত আকৃষ্ট করবেই কেননা তাদের চোখ ও কান খোলা রয়েছে তাই আধুনিকতার প্রভাব তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেই। এমন পরিস্থিতিতে সুক্ষ্ম ও ধীর গতিতে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবাই উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু যদি আপনি হাত গুটিয়ে বসে থাকেন আধুনিকতার ছোঁবলকে কিভাবে মোকাবেলা করবেন তা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।”
“ইলহাম কারীমি”, একজন শিক্ষাবিদ এবং শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে সক্রিয় সমাজকর্মী, তিনি বলেছেন, ‘পরিবারগুলোর উচিত তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শৈশব থেকেই প্রয়োগ করা, যাতে সন্তান বড় হয়ে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে’।
যে ৫টি পদক্ষেপ কন্যা সন্তানদের শৈশব থেকেই হিজাবের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। “নার্সারি/প্লে ও প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য শিক্ষকদের আদেশ-উপদেশ বা গ্রন্থবদ্ধ বিদ্যায় সীমিত করা উচিৎ নয় বরং, শিশুদের কোমল প্রকৃতি ও মনোভাবের সাথে সামঞ্জস্যশীল এমনসব পরিকল্পনা সাজানো উচিৎ যাতে তাদের স্মৃতির পটে চিত্তাকর্ষক ও সহজে পালনীয় হয় সে ভাবে হিজাবের সাথেও পরিচয় করানো যায়।
১. কন্যা সন্তানের সাথে এমন খেলাধুলা করা যা পরোক্ষভাবে তাকে হিজাবের প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
২. হিজাব সম্পর্কিত গল্প উপন্যাসের পুস্তকাদি বাসায় সংগ্রহে রাখা এবং তাদের পড়ে শোনানো।
৩. মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানগুলোতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগামে শিশুদেরকে সাথে নিয়ে অংশগ্রহণ করা।
৪. শিশুকে রঙিন ও উজ্জ্বল ধর্মীয় পোশাক ও আকর্ষণীয় স্কার্ফ কিনে উপহার দেওয়া।
৫. ইসলামিক আদর্শ মেনে চলে এমন ব্যক্তি ও পরিবারের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা এবং তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা থাকা।
হিজাবের সাথে পরিচয় করাতে বা কন্যা সন্তানকে পবিত্রতার শিক্ষায় জোর-জবরদস্তি কোনো কার্যকর পদ্ধতি নয়। এই ক্ষেত্রে পিতা-মাতার উচিৎ হিজাব সম্পর্কে গবেষণা ও অধ্যয়ন করা। এছাড়াও, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কন্যা সন্তানদের হিজাব ও পবিত্রতা বিষয়ে পাঠ দান করা। “যেভাবে স্কুলে খেলাধুলা ও কুরআন তেলাওয়াত ও নামাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে, তেমনি হিজাবের সুবিধাগুলো বোঝানোর জন্য বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা উচিত। এছাড়াও, অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া উচিত যারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত ও আকর্ষণীয়ভাবে হিজাবের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা ও পর্যালোচনা করবেন।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
مَثَل الّذی یَتَعَلَّم فی صِغره کالنَّقْشِ فِی الْحَجَرِ
“শৈশবে যে জ্ঞান অর্জন করে, তার উপমা হচ্ছে যে তার শৈশবে অর্জিত জ্ঞান পাথরে অঙ্কিত ও খোদাই কৃত চিত্রকর্ম বা নকশার মতো (যেমন পাথরের ওপর খোদাইকৃত চিত্র ও নকশা স্থায়ী হয় ঠিক তেমনি শৈশবে অর্জিত জ্ঞান মানব মনে স্থায়ী হয়)।”
স্মরণ রাখুন! সময় নষ্ট করবেন না। যদি জ্ঞানের ভিত তৈরী করতে সময় ক্ষেপন করেন তবে আপনি আপনার সন্তানদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হবেন।
মিডিয়া মিহির/মুহাম্মাদ রুস্তম আলী