স্বাস্থ্য পরামর্শজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

যে দোয়াটি আমিরুল মুমিনীন (আ.) রোগীর আরোগ্যের জন্য শিক্ষা দিয়েছেন

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানবজীবনের রোগ-ব্যাধি, দুঃখ ও বিপদে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা এক অনন্য আশ্রয়। ইতিহাসজুড়ে নবী-রাসূল এবং চৌদ্দ ইমাম তাঁদের উম্মতকে শিখিয়েছেন কীভাবে সংকটে আল্লাহর দিকে হাত বাড়াতে হয়। করোনার মতো মহামারির সময়ও সেই প্রার্থনাগুলো হৃদয়ে আলো জ্বালায়। ঠিক তেমনই এক দোয়া শিখিয়েছিলেন আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)—এক অসুস্থ মানুষকে, যে স্থায়ী কষ্টে জর্জরিত হয়ে তাঁর কাছে এসেছিল স্বস্তি ও আরোগ্যের দিশা চাইতে।

একজন রঙ-উজ্বল, অসুস্থ মানুষ আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর কাছে এসে বলল,
হে মুমিনদের নেতা, আমি সবসময় অসুস্থ থাকি; অসংখ্য ব্যথা ও কষ্ট আমাকে ঘিরে রাখে। আমাকে এমন একটি দোয়া শেখান, যার মাধ্যমে আমি আমার রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে সাহায্য পেতে পারি।

হাদিসগ্রন্থ মিহাজুদ দাওয়াত-এ ইবনে আব্বাস বলেন: “আমি আমিরুল মুমিনীনের পাশে বসে ছিলাম। তখন এই মানুষটি এসে অনুরোধ করে।

হযরত আলী (আ.) তাকে বললেন: আমি তোমাকে সেই দোয়াটি শেখাব, যা জিবরাঈল (আ.) শেখিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে, যখন হাসান ও হুসাইন (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি বললেন, দোয়াটি হলো—

اِلهى كُلَّما اَنْعَمْتَ عَلَىَّ نِعْمَةً قَلَّ لَكَ عِنْدَها شُكْرى
وَ كُلَّما ابْتَلَیْتَنى بِبَلِیَّةٍ قَلَّ لَكَ عِنْدَها صَبْرى

فَيا مَنْ قَلَّ شُكْرى عِنْدَ نِعَمِهِ فَلَمْ يَحْرِمْنى
وَ يا مَنْ قَلَّ صَبْرى عِنْدَ بَلائِهِ فَلَمْ يَخْذُلْنى

وَ يا مَنْ رَانى عَلَى الْمَعاصى فَلَمْ يَفْضَحْنى
وَ يا مَنْ رَانى عَلَى الْخَطايا فَلَمْ يُعاقِبْنى عَلَیْها

صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ
وَاغْفِرْ لى ذَنْبى وَ اشْفِنى مِنْ مَرَضى
اِنَّكَ عَلى كُلِّ شَیْءٍ قَديرٌ

 হে আমার উপাস্য, তুমি যখনই আমাকে কোনো নেয়ামত দাও, আমি তার তুলনায় খুব অল্পই তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি; আর যখনই তুমি আমাকে কোনো পরীক্ষায় ফেলো, আমার ধৈর্যও ততটাই অপ্রতুল থাকে।’

হে সেই পরম দয়ালু, যার নেয়ামতের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা কম ছিল, তবু তুমি আমাকে বঞ্চিত করোনি;
হে সেই করুণাময়, যার পরীক্ষার সময় আমার ধৈর্য ক্ষীণ ছিল, তবুও তুমি আমাকে অসহায় করে ছাড়োনি।’

‘হে তিনি, যিনি আমাকে পাপ করতে দেখেও লজ্জিত করেননি;
হে তিনি, যিনি আমার ভুল-ত্রুটি দেখেও তাৎক্ষণিক শাস্তি দেননি।’

‘হে আল্লাহ, প্রেরণ কর তোমার রহমতের দরুদ মুহাম্মদ ও তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজনের ওপর; এবং আমাকে ক্ষমা কর, আমার রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য দাও। নিশ্চয় তুমি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (মিহাজুদ দাওয়াত ও মিনহাজুল ইবাদাত, পৃষ্ঠা ৮)

দোয়ার ব্যাখ্যা

এই দোয়ায় আমিরুল মুমিনীন (আ.) মানুষের কষ্ট ও বিপদের মূল দর্শন তুলে ধরেছেন। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে—মানুষের ভুল, গাফিলতি ও পাপ অনেক সময় রোগ-বিপদকে ডেকে আনে। যেমন আমরা দোয়া-এ-কুমাইলের প্রথম দিকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি: হে আল্লাহ, সেই সকল পাপ ক্ষমা কর, যেগুলো বিপদ-বালা নামিয়ে আনে। ঐশী গ্রন্থসমূহেও উল্লেখ আছে—যখন মানুষ তার পালনকর্তার দিকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, তখন আল্লাহ নানা কষ্ট ও অসুস্থতার মাধ্যমে তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে—হাসান ও হুসাইন (আ.) তো নিষ্পাপ, তাহলে কেন এ দোয়া শিখানো হলো? এর উত্তর হলো: ইমামগণ শিক্ষক। তাঁরা নিজেদের মাধ্যমে আমাদের শেখান কীভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয়, কীভাবে নম্রতা, কৃতজ্ঞতা ও বিনয় নিয়ে তাঁর দিকে ফিরে যেতে হয়। তাঁরা শিক্ষকের মতো আমাদের সামনে আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন—যদিও তাঁরা নিজে পাপমুক্ত।

ঠিক তাই আমরা দোয়া-এ-কুমাইল, সাহিফা সাজাদিয়া ও অন্যান্য দোয়াগুলোতেও দেখি: ইমামগণ নিজেদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান, অথচ মূল শিক্ষা আসলে আমাদের জন্য।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button