বিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

যুদ্ধ শুরুর গুজব শত্রুর মানসিক যুদ্ধের অংশ: ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৪ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরানের প্রতিরক্ষা ও সশস্ত্র বাহিনী সমর্থন মন্ত্রী জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে বলেছেন, “শত্রুপক্ষ বারবার বলছে—‘আক্রমণ হবে, আক্রমণ হবে’—এর উদ্দেশ্য সমাজে আতঙ্ক ছড়ানো, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ানো ও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করা। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি মানসিক ও শীতল  যুদ্ধের কৌশল।

তুরস্ক সফর ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সম্প্রতি দুই দিনের সরকারি সফরে তুরস্ক যান। এটি দীর্ঘদিন পর এই স্তরে অনুষ্ঠিত কোনো সফর। তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল ইয়াশার গুলার-এর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে এই সফরটি হয় ।

সফরকালে জেনারেল  নাসিরজাদে আঙ্কারায় তুর্কি সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও সীমান্ত নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “ইরান ও তুরস্ক উভয়েই আঞ্চলিক ও ইসলামি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমাদের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় অঞ্চলজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।”

তিনি আরও জানান, উভয় দেশ ভবিষ্যতে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বিনিময়ের ব্যাপারে একমত হয়েছে।

ইরান ও তুরস্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে”

জেনারেল  নাসিরজাদে বলেন, আলোচনার একটি অংশ ছিল ইসরায়েলি হামলা ও আঞ্চলিক হুমকি নিয়ে।

“ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন মানে না এবং গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করছে। এখন দেশগুলো বুঝে ফেলছে যে সিয়োনিস্ট শাসনই আসল হুমকি। এই হুমকি মোকাবিলায় আঞ্চলিক ঐক্য গড়ে উঠছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও যৌথ স্বার্থ অনেক বেশি। ইরান ও তুরস্ক আজ আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি।”

শান্তি নয়, এটি আত্মসমর্পণের নীতি”

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “আমেরিকা এখন ‘শক্তির মাধ্যমে শান্তি’ নীতি প্রচার করছে, কিন্তু বাস্তবে এটি শান্তি নয়, এটি জোরপূর্বক আত্মসমর্পণ। স্বাধীন ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এই নীতি কখনোই মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।”

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, “এই ধারণা প্রথম তোলা হয় প্রেসিডেন্ট বুশ সিনিয়রের সময়, যখন তিনি ‘এক-মেরু বিশ্বব্যবস্থা’ ঘোষণা করেন। কিন্তু বিশ্ব তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।”

অস্ত্র পরিবহন পুরনো কৌশল—এটি মানসিক যুদ্ধ”

জেনারেল  নাসিরজাদে বলেন, মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ আনা–নেওয়া নতুন কিছু নয়। “আমাদের দায়িত্ব দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বজায় রাখা। কিন্তু নাগরিকদের উচিত নয় এসব প্রচারণার কারণে আতঙ্কিত হওয়া বা অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত করা।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান যুদ্ধ এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক যুদ্ধ (Cognitive Warfare)। শত্রু বারবার যুদ্ধের গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। জনগণের উচিত এই মানসিক যুদ্ধে সতর্ক থাকা এবং দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক রাখা।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি কোনো যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা প্রতিরক্ষা করতে প্রস্তুত — যেমন ১২ দিনের যুদ্ধে আমরা শত্রুকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিলাম।”

 “বিশ্ব আরও ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন দেখবে”

‘কারাভান-এ-সমুদ’ (Global Convoy of Resistance)–এর ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় নাসিরজাদে বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত জাতিসংঘের আইনগুলোকে ইসরায়েল প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করছে। এমনকি আমেরিকা আন্তর্জাতিক আদালতের (হেগ) রায় অগ্রাহ্য করে সেটিকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে।”

তিনি বলেন, “এই কারাভান ছিল গাজার গণহত্যা ও খাদ্য অবরোধের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মানবিক প্রতিবাদের প্রতীক। ইসরায়েল সেটিকেও আক্রমণ করেছে। এতে বিশ্ববাসী আরও বুঝতে পারছে—এই শাসনব্যবস্থা মানবতার জন্য কত বড় হুমকি।”

“আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতেও বিশ্বজুড়ে আরও ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন দেখা যাবে।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল  নাসিরজাদে তাঁর বক্তব্যে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন— “শত্রুর প্রচারণা ও মানসিক যুদ্ধে বিভ্রান্ত না হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন অব্যাহত রাখুন। আমাদের দায়িত্ব দেশের প্রতিরক্ষা, আর তা আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতির সঙ্গে করব।”

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button