বিশ্ব

মোসাদ সদরদপ্তরে ইরানের হামলায় ৩৬ জন নিহত: আইআরজিসি মুখপাত্র

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মুখপাত্র বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন মোসাদের সদরদপ্তরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৬ জন নিহত হয়েছে।

আইআরজিসির মুখপাত্র ও গণসংযোগ উপ-প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মাদ নায়েনি, রবিবার স্টুডেন্টস ডে উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের সামরিক পদক্ষেপগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব দিতে ইরান দ্রুত, সমন্বিত ও পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া জানায়।

মেহর নিউজ এজেন্সি উদ্ধৃত নায়েনির বক্তব্য অনুযায়ী, তেহরানে ইসরাইলের জ্বালানি ডিপোতে হামলার পর ইরান পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি হামলায় হাইফা রিফাইনারিকে লক্ষ্যবস্তু করে। ইসরাইলি সূত্রগুলোও এই হামলাকে “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পের শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টান্ত” বলে উল্লেখ করেছে, যা রিফাইনারিটিকে অকার্যকর করে দেয়। তিনি আরও জানান, ইরানি গোয়েন্দা কেন্দ্র লক্ষ্য করে ইসরাইলের হামলার জবাবে ইরান একটি মোসাদ কেন্দ্র আক্রমণ করে, যার ফলে ৩৬ জন নিহত হয়।

নায়েনি বলেন, ইরানের “ট্রু প্রমিজ–৩” অভিযান যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয়েছিল। তিনি এটিকে একটি বহুস্তরীয়, উদ্ভাবনী ও সমন্বিত সামরিক অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে ইলেকট্রনিক যুদ্ধ, সাইবার অপারেশন, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন—সবই একত্রে ব্যবহৃত হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরান পূর্ণ গোয়েন্দা-প্রাধান্য এবং অত্যন্ত বিস্তৃত ডেটা ব্যাংকসহ যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল।

তার মতে, ইসরাইলি সামরিক ও গোয়েন্দা ক্ষয়ক্ষতি ইরানের তুলনায় “নিশ্চিতভাবেই বেশি” ছিল। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনে একটি ৩২ তলা ভবনের ভূগর্ভস্থ মাইনাস–ওয়ান ফ্লোরে অবস্থিত স্টক এক্সচেঞ্জ ডেটা সেন্টার নির্ভুলভাবে আঘাত করে।

নায়েনি জানান, ইসরাইল তার সব ধরনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—এমনকি মার্কিন সমর্থিত নেটওয়ার্কও—সক্রিয় করেছিল, কিন্তু তবুও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল যে “বৃহৎ হামলার” সতর্কতা দিয়েছিল, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্রই তার তুলনায় বহুগুণ বেশি ক্ষতি করেছে।

তিনি বলেন, ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তোলার পেছনে দেশের তরুণ বিশেষজ্ঞদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরান–ইরাক যুদ্ধের পর থেকে ইরানের প্রতিরক্ষা নীতি মানুষের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং অসম যুদ্ধনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষকে “সমান শক্তির” হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

নায়েনি ১২ দিনের যুদ্ধকে সামরিক বিশ্লেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেস স্টাডি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইরান খুব দ্রুত তার কমান্ড কাঠামো পুনরুদ্ধার করে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ২২ দফা ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পরিচালনা করে এবং শক-প্রভাব ছাপিয়ে পুনরায় যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নেয়—যা ছিল অত্যন্ত নির্ণায়ক।

তিনি আরও জানান, মার্কিন ও ইসরাইলি থিঙ্ক ট্যাংকগুলো এখন মনে করছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়কে “১২ দিনের যুদ্ধের আগে ও পরে”—এই দুই ভাগে ভাগ করা উচিত। তারা এই যুদ্ধকে “অভূতপূর্ব” বলে উল্লেখ করছে এবং ভবিষ্যতে বৈশ্বিক কৌশলগত গবেষণার একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে মনে করছে।

নায়েনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালে ইরান ৪০০–৫০০ সাইবার হামলার মুখোমুখি হয় এবং ইরানও পাল্টা সাইবার অভিযান চালায়। সাইবার ও গোয়েন্দা যুদ্ধের অনেক তথ্যই নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ১৩ জুন ইসরাইল কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানে হামলা চালায়, যখন ওয়াশিংটন ও তেহরান পারমাণবিক আলোচনার মধ্যে ছিল। এই ইসরাইলি হামলার পর ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে ইরানে অন্তত ১,০৬৪ জন নিহত হয়—এর মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।

যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।

এর জবাবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী অধিকৃত অঞ্চলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনাসহ পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি কাতারের আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলা চালায়।

২৪ জুন, ইরান ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের বিরুদ্ধে সফল প্রতিশোধমূলক অভিযানের মাধ্যমে আগ্রাসন বন্ধ করতে সক্ষম হয়।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button