জীবনযাপনকুরআনকুরআন শিক্ষাতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

মানুষের দুর্ভাগ্যের মূল কারণ: গোনাহ ও আল্লাহর উপস্থিতির অজ্ঞতা

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মরহুম আয়াতুল্লাহ আজিজুল্লাহ খুশওয়াক্ত, যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট নৈতিক শিক্ষাগুরু, তাঁর এক নৈতিক শিক্ষার পাঠে মানুষের দুর্ভাগ্যের কারণ” বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন: আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মানুষের কাজ দেখেন—দিনে হোক বা রাতে, গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে, একাকী হোক বা জনসমক্ষে। তাঁর কাছে কিছুই গোপন নয়। তিনি জানেন, মানুষ তাঁর আদেশ মানছে কি না। মানুষ যখন ভাবে — “কেউ দেখছে না”, তখনই সে ভুল পথে পা বাড়ায়। অথচ একজন সর্বদা দেখছেন — তিনি আল্লাহ। এই একটি বিশ্বাস যদি অন্তরে জাগ্রত থাকে, তাহলে মানুষের জীবন বদলে যাবে; কারণ যে মানুষ আল্লাহর নজরদারিতে থাকার অনুভূতি রাখে, সে গোনাহ করতে পারে না।

আল্লাহ সবকিছু দেখেন প্রকাশ্য হোক বা গোপন

আল্লাহ তাআলা বলেন—

أَلَمْ يَعْلَم بِأَنَّ ٱللَّهَ يَرَىٰ
সে কি জানে না যে আল্লাহ তাকে দেখছেন?”
(সুরা আলাক ৯৬:১৪)

আরেক স্থানে ইরশাদ হয়েছে—

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ ۚ
“তোমরা যেখানে থাকো, তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন (সবকিছু জানেন ও দেখেন)।”
(সুরা হাদীদ ৫৭:)

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন—

“ইহসান হলো— তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছো; আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না-ও পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন।”
(সহিহ মুসলিম)

কেয়ামতের দিন বিচারকও হবেন স্বয়ং আল্লাহ

কোরআনে আল্লাহ বলেন—

إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلْمِرْصَادِ
“নিশ্চয়ই তোমার রব পাহারায় রয়েছেন (প্রত্যেক কাজ তদারকি করছেন)।”
(সুরা ফজর ৮৯:১৪)

রাসূল ﷺ বলেছেন—

“কিয়ামতের দিন মানুষের পা তার রবের সামনে থেকে সরবে না, যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে…”
(তিরমিযি)

মানে— তিনি দেখেছেন, এজন্যই তিনি প্রশ্ন করবেন।

গোনাহ — মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের কারণ

আল্লাহ বলেন—

وَمَآ أَصَـٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٍۢ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ
“তোমাদের যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজের হাতের কামাই।”
(সুরা শূরা ৪২:৩০)

রাসূল ﷺ বলেছেন—

যখন কোনো কওম প্রকাশ্যে গোনাহ করতে থাকে, তখন তাদের মধ্যে এমন বিপদ নাজিল হয় যা আগে কখনো ছিল না।”
(ইবনে মাজাহ)

আল্লাহকে স্মরণ রাখাই হলো পাপের বিরুদ্ধে আসল প্রতিরোধ

আল্লাহ বলেন—

إِنَّ ٱلَّذِينَ يَتَّقُونَ إِذَا مَسَّهُمْ طَـٰٓئِفٌۭ مِّنَ ٱلشَّيْطَـٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ
“মুতাক্বীরা যখন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে, তখনই তারা স্মরণ করে (আল্লাহকে), ফলে তারা সোজা হয়ে যায়।”
(সুরা রাফ :২০১)

সুতারাং আল্লাহ দেখছেন — এই একটি সত্য যদি অন্তরে স্থায়ী হয়, তবে গোনাহ থেকে বাঁচা অনেক সহজ হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি আল্লাহর নজরদারিতে থাকার অনুভূতি ধরে রাখে, সে কখনও গোপনে পাপ করতে পারে না।

এটাই তাকওয়ার মূল, আর তাকওয়াই সফলতার আসল পথ।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button