জীবনযাপনকুরআন শিক্ষাধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো সমাজ থেকে অজ্ঞতা দূর করা: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরানের বিশিষ্ট আলেম ও মারজায়ে তাকলীদ হযরত আয়াতুল্লাহ আল উজমা আব্দুল্লাহ জাওয়াদি বলেছেন, যে ব্যক্তি অবিবেচক ও তাড়াহুড়োতে সিদ্ধান্ত নেয়, সে শুধুই অনুতাপের স্বাদ পাবে; কিন্তু যে ব্যক্তি বিচক্ষণ, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী, সে জীবনে নিরাপত্তা ও সফলতার অধিকারী হবে।

আজ (বুধবার) কোমের মসজিদে আজমে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলির সাপ্তাহিক নৈতিকতা বিষয়ক পাঠ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সঠিক চিন্তাভাবনা ও দূরদর্শিতার গুরুত্ব
বক্তৃতায় তিনি নাহজুল বালাগা’র সংক্ষিপ্ত বাণীসমূহের ব্যাখ্যা দিয়ে ইমাম আলী (আ.)-এর ১৮১ নম্বর হিকমতের উদ্ধৃতি দেন:  ثَمَرَةُ التَّفْرِیطِ النَّدَامَةُ، وَثَمَرَةُ الْحَزْمِ السَّلَامَةُ  “অবহেলা ও তাড়াহুড়োর ফল হলো অনুতাপ, আর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ফল হলো নিরাপত্তা।”

তিনি বলেন, মানুষ যেন কখনো চিন্তা, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতা ছাড়া কোনো কাজে প্রবৃত্ত না হয়। কারণ ব্যক্তিগত আচরণ ও সিদ্ধান্ত সরাসরি সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতিটি ব্যক্তিগত পদক্ষেপ সামাজিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাবিত হয়।

তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বুদ্ধির সমন্বয়
আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি আরও বলেন, তাত্ত্বিক বুদ্ধি (ʿaql-e nazarī) মানুষের চিন্তা ও সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের দায়িত্বে থাকে, আর ব্যবহারিক বুদ্ধি (ʿaql-e ʿamalī) সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ইচ্ছাশক্তির দায়িত্বে নিয়োজিত। এই দুই শক্তি স্বতন্ত্র হলেও কেবল শক্তিশালী আত্মা, সুশৃঙ্খল নফস ও আল্লাহমুখী ঈমানই তাদের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারে, যাতে মানুষের জীবন সঠিক পথে অগ্রসর হয়।

তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জিহাদ হলো—মানুষ নিজের অন্তরের শক্তি ও ক্ষমতাগুলো চিনে, তাদের দায়িত্ব বোঝে এবং তাদের সমন্বিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত ও ন্যায়সঙ্গত কর্ম সম্পাদন করা।

হাওযা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ
হাওযা (ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কাজ হয় তা মূলত তাত্ত্বিক বুদ্ধির ক্ষেত্র, যার উদ্দেশ্য হলো অজ্ঞতা (جهل) দূর করা জ্ঞানের মাধ্যমে। কিন্তু নৈতিক শিক্ষক ও সমাজসংস্কারকদের কাজ ব্যবহারিক বুদ্ধির ক্ষেত্র, যারা মানুষের আচরণ, সিদ্ধান্ত ও জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে অবিবেচনা ও অজ্ঞতাকে (جهالت) দূর করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “অজ্ঞতা হলো জ্ঞানের অভাব, কিন্তু অবিবেচনা প্রকাশ পায় আচরণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণে। সমাজ পরিচালনা ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অবিবেচনা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।”

অজ্ঞ জ্ঞানীর বিপদ
আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি হযরত আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর উদ্ধৃতি দেন: رُبَّ عَالِمٍ قَدْ قَتَلَهُ جَهْلُهُ، وَ عِلْمُهُ مَعَهُ لَا یَنْفَعُهُ “অনেক জ্ঞানী রয়েছেন, যাদের অজ্ঞতা তাদের ধ্বংস করেছে, আর তাদের জ্ঞান তাদের কোনো উপকারে আসেনি।”

তিনি বলেন, “অনেক মানুষ জ্ঞানে শিক্ষিত হলেও, বাস্তব জীবনে তারা অবিবেচনার শিকার হন। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রজ্ঞা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হন। তাই মানুষের উচিত এমনভাবে জীবন পরিচালনা করা যাতে তার অন্তরের ‘সিদ্ধান্তগ্রহণের কারখানা’ কেবল বুদ্ধি ও তাকওয়ার ওপর নির্ভর করে কাজ করে। জ্ঞান একা যথেষ্ট নয়; অনেক পণ্ডিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবহারিক বুদ্ধির অভাবে আচরণগত অজ্ঞতার শিকার হন।”

সঠিক সিদ্ধান্ত ও সফলতার চাবিকাঠি
নাহজুল বালাগার ৪৮ নম্বর হিকমতের আলোকে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও সামাজিক সাফল্য তখনই অর্জিত হয়, যখন সিদ্ধান্তগুলো চিন্তা, যুক্তি ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়। সঠিক চিন্তার অন্যতম শর্ত হলো গোপনীয়তা রক্ষা ও আস্থা বজায় রাখা।

বক্তৃতার শেষাংশে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমোলি জোর দিয়ে বলেন, “যে ব্যক্তি অবহেলা করে বা পরিকল্পনা ছাড়া পদক্ষেপ নেয়, সে শেষ পর্যন্ত অনুতপ্ত হয়। কিন্তু যে বিচক্ষণ, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী, সে জীবনে নিরাপত্তা, স্থিতি ও সফলতা অর্জন করে।”

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button