বিবাহের ফজিলত
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন | প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যে কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন যৌবনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়, তার অন্তরের সবচেয়ে প্রগাঢ় আকাঙ্ক্ষা হয় বিবাহ এবং একটি উষ্ণ, স্নেহময় পরিবার গঠন করা। তারা খুঁজে পেতে চায় এক সঙ্গী, একজন মনের কথা বলা বন্ধু, একজন বিশ্বাসযোগ্য সহচর—যার সঙ্গে জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা যায়। দাম্পত্য জীবনের আশীর্বাদ, স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতা তাদের আকর্ষণ করে, এবং তরুণেরা মনে করে, সুখী জীবন গড়ে ওঠে যৌথ সংসারের ছায়ায়।
এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত ও প্রাকৃতিক, যা উপেক্ষা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে, তরুণদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হলো পারিবারিক উষ্ণতা। সেই ঘরে তারা তাদের অন্তরের উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তাকে রূপান্তর করতে পারে নিশ্চয়তা, ধৈর্য ও শান্তিতে; যেখানে তারা দুঃখ-চিন্তাকে ভুলে, জীবনের আনন্দ খুঁজে পায়।
বিবাহ এবং তার বাস্তবায়ন সমাজে সকলের জন্য সহজ হওয়া উচিত। এটি কেবল সামাজিক নয়, বরং একান্ত প্রয়োজনীয় জীবনধারার অনুষঙ্গ—যেমন পানি ও রুটি—যা প্রতিটি সমাজে সকল বস্তুপণ্যের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজকের সমাজে প্রতিনিয়ত বিবাহ-বাহুল্য, মহার অতিরিক্ত উচ্চতা, অপচয় ও বিলাসিতা বাড়ছে! যার পরিণতি সাধারণ মানুষের জন্য সহ্য করা কঠিন এবং কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি, পিতা-মাতারা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি কোনো মনোযোগই দেন না। বরং, কিছু পিতা-মাতা ভুল প্রতিযোগিতার কারণে তাদের সন্তানদের, বিশেষ করে তরুণী কন্যাদের, দুর্ভাগ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
আমরা জীবনের সেরা পথ ও পদ্ধতি খুঁজে পাই রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর পবিত্র পরিবার (আ.)-এর বাণী ও কর্মকাণ্ডে। ইসলামের বিধানসমূহকে আমরা দেখতে পাই সুখী ও সার্থক জীবনযাপনের সবচেয়ে উজ্জ্বল আয়না হিসেবে। সুতরাং, আমাদের জন্য উত্তম হবে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আকাশকর্মী নেতাদের জীবনপদ্ধতিকে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের দিশা হিসেবে অনুসরণ করা, যাতে আমরা হয়তো যুগের ফিতনা ও বিপদ থেকে নিরাপদ থাকতে পারি।
১. বিবাহের প্রভাব
قال رسول الله صلی الله علیه و آله و سلم : اذا تزوج الرجل احرز نصف دینه
বাংলা অনুবাদ:রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “যখন একজন পুরুষ বিবাহ করেন, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেককে রক্ষা করে।”[1]
২. (দরিদ্রতা)-তে বিবাহ না করাটা
قال الإمام الصادق علیه السلام : ……. من ترک التزویج مخافة الفقر فقد أساء الظن بالله
বাংলা অনুবাদ: ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি দরিদ্রতার ভয়ে বিবাহ থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেছেন—কারণ আল্লাহ বলেন: যদি তারা দরিদ্রও হয়, তবে আমি (আমার) দান থেকে তাদের সমৃদ্ধ করে দেব।’[2]
৩. স্বামী/স্ত্রীর স্বর্গীয় দয়া
قال النبی صلی الله علیه و آله و سلم:
یفتح ابواب السماء بالرحمة فی أَربع مواضع… و عند النکاح
বাংলা অনুবাদ: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: “আকাশের দরজাগুলো চার সময় দয়া দিয়ে খুলে যায়: বৃষ্টি পড়ার সময়, যখন সন্তান পিতামাতার দিকে তাকায়, কাবা ‘দ্বার খোলার’ সময় এবং বিবাহের সময়।[3]
- অবিবাহিতদের শাস্তি সম্পর্কে সতর্কবাণী
قال رسول الله صلی الله علیه و آله و سلم اکثر أهل النار العزاب.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হলো অবিবাহিতরা।[4]
- সাদাকাত (সম্পর্ক নির্মাণ) ত্যাগের দরুণ—এডা “خانه دوستداشتنی”
قال الإمام الصادق علیه السلام:
إن الله یحب البيت الذي هو العرس.
বাংলা অনুবাদ: ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: “আল্লাহ এমন ঘরকে ভালোবাসেন, যেখানে বিবাহ-অনুষ্ঠান ঘটেছে।”[5]
সারসংক্ষেপে:
- বিবাহ একজনকে দ্বীনের অর্ধেক রক্ষা করার সুযোগ দেয়।
- দরিদ্রতা ভয়ে বিবাহ থেকে বিরত থাকা আল্লাহ সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে।
- বিবাহ এমন একটি সময় যখন আকাশের দরজা দয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়।
- অবিবাহিত থাকা প্রবণতা জাহান্নামের পথে নিয়ে যেতে পারে।
- বিবাহ-অনুষ্ঠান ঘটানো আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, এবং সেই ঘর তিনি ভালোবাসেন।
[1] . সূত্র: মুস্তাদরাক আল-ওয়াসায়েল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ১৫৪।
[2] . সূত্র: “মন লা ইয়াহযারুহুল ফকীহ”, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫১; এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা।
[3] . সূত্র: বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ১০৩, পৃষ্ঠা ২২১; আলোচনার মধ্যে সংযোজিত।
[4] . সূত্র: “মন লা ইয়াহযারুহুল ফকীহ”, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫১।
[5] . সূত্র: ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ২২, পৃষ্ঠা ৭।