বায়ুদূষণে স্বাস্থ্যরক্ষা: প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গি
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির:সংবাদ সংস্থার সামাজিক বিভাগ–এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, নাফিসেহ হোসেইনি-ইকতা, ইরানি ও সমন্বিত চিকিৎসা দপ্তরের মহাপরিচালক, জীবনের ছয়টি মৌলিক নীতির একটি হিসেবে বাতাসের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেছেন: বাতাসের গুণমান সরাসরি শরীরের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই দূষিত বাতাসে অবস্থান করা হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং মাথাব্যথা, ক্লান্তি এমনকি মনোযোগের ঘাটতির মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। সুতরাং, দূষণের সময় স্বাস্থ্যবিধি, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি দূষিত বাতাসের কিছু প্রভাব হিসেবে ত্বক শুষ্ক হওয়া, মাথাব্যথা, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, অস্থিরতা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, মনোযোগ হ্রাস, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া ও বিষণ্নতা উল্লেখ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী, শিশু, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারা দূষণের মাত্রা বেড়ে গেলে যতটা সম্ভব ঘরের বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলবেন।
হোসেইনি-ইকতা জোর দিয়ে বলেন যে, জীবনযাত্রার সংস্কার ক্ষতির তীব্রতা কমাতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, এ সময় হজমশক্তি মজবুত করা উচিত এবং ভারী, তৈলাক্ত ও ঘন খাবার (যেমন: গরুর মাংস, বেগুন, প্রক্রিয়াজাত মাংস, টিনজাত খাবার, ম্যাকারনি ও লাসানিয়া) পরিহার করতে হবে এবং তার পরিবর্তে হালকা খাবার খেতে হবে। একইসাথে অতিভোজন ও বেমানান খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
তিনি যবের স্যুপ (যাতে পেঁয়াজপাতা, ধনেপাতা, শোলপা/শুলফা, তুলসি, পালং শাক ও শালগম ব্যবহার করা যায়) এবং লেটুস সালাদ (গাজর, জলপাই তেল, লেবুর রস বা প্রাকৃতিক নারাঙ্গের রসসহ) খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন, এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ও দূষিত বাতাস থেকে শোষিত বিষাক্ত পদার্থ কমাতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইরানি ও সমন্বিত চিকিৎসা দপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, আপেল, ডালিম, লেবু এবং বাদাম জাতীয় খাদ্য (যেমন: আখরোট, মিষ্টি বাদাম ও হ্যাজেলনাট) শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে উপকারী। এছাড়া সুগন্ধি ঘ্রাণ যেমন লেবু, কমলা ও আপেলের গন্ধ নেওয়া এবং পানি ফুটিয়ে তার সঙ্গে গোলাপ জল বা ভিনেগার মিশিয়ে ব্যবহার করা ঘরের বাতাস শুদ্ধ করতে কার্যকর।
তিনি বিশেষ করে শুষ্ক প্রকৃতির মানুষের জন্য প্রচুর তরল গ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন, পানি, দুধ এবং প্রাকৃতিক ফলের রস (যেমন আপেল, কমলা, মিষ্টি লেবু ও গাজরের রস) পান করা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়ক।
হোসেইনি-একতা পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক পুষ্টি এবং বিশেষ করে দূষিত বাতাসে বাইরে ভারী ব্যায়াম থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন: শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগীরা শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করতে পানি, মধু ও টাটকা লেবুর রসের মিশ্রণ অথবা গরম পানির ভাপ ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও, বাড়ি ফেরার পর কুসুম গরম হালকা লবণপানিতে মুখ ও গলা কুলি করা, দূষিত বাতাসে মাস্ক ব্যবহার করা, সিগারেট ও হুক্কা থেকে বিরত থাকা, এবং সপ্তাহান্তের ছুটিতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া—এসবই ইরানি চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।