ফেমিনিজম নাকি সমতার ভ্রান্ত ধারণা?
উম্মে যাহরা আহমেদ | ১লা নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: আল্লাহ তায়ালা, যিনি মানুষের স্রষ্টা, নারী ও পুরুষকে মানবতা ও চরিত্রের দিক থেকে সমান হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এটি প্রতিটি মানুষের মূল অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু আধুনিক ফেমিনিজম কখনো কখনো নারীর মূল মানবিক মর্যাদাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র লিঙ্গগত বৈষম্য সমাধানের দিকে মনোযোগ দেয়। এর ফলে মানবিকতা প্রান্তিক হয়ে যায় এবং নারীর স্বাভাবিক মর্যাদা কমিয়ে আনা হয়। এটি নারীর প্রতি সবচেয়ে বড় অন্যায়।
ফেমিনিজমের প্রাথমিক লক্ষ্য ও বর্তমান বাস্তবতা
প্রথমে ফেমিনিজম ন্যায় ও সমতার পতাকা উঁচিয়ে নারীকে বৈষম্যের ছায়া থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল—নারীর নীরব কণ্ঠকে সমাজে প্রকাশ করা। কিন্তু আজকের দিনে দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে ফেমিনিজম আর নারীর পক্ষেই দাঁড়ায় না, বরং নারী ও পুরুষের মধ্যে এক ধরনের শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করে।
যে ফেমিনিজম একসময় নারীদের স্বাধীনতা ও স্বীকৃতির জন্য কাজ করত, এখন তা প্রায়শই নারীর প্রাকৃতিক ও মানবিক ভূমিকা বিলুপ্ত করার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভূমিকা কোনো দুর্বলতার চিহ্ন নয়; বরং এটি নারীর শক্তি এবং জীবনের ধারাবাহিকতার মূল ভিত্তি।
ফেমিনিজম ও নারীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
আধুনিক কিছু ফেমিনিস্ট প্রবণতা নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রাকৃতিক পার্থক্যকে অস্বীকার করে। এর ফলে নারীরা তাদের নারীসত্ত্বার জন্য লজ্জিত বা সংকুচিত বোধ করতে পারে।
এই অযৌক্তিক প্রয়াসে সমতার নামে নারী নিজেই তার মূল্য এবং নারীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, মানবতা এবং চরিত্রের দিক থেকে নারী ও পুরুষ সমান, কিন্তু তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও দায়িত্ব অনুযায়ী আলাদা নিয়ম ও অধিকার প্রয়োজন।
কোরআনের নির্দেশ
কোরআন এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে:
«یا ایها الناس انا خلقناکم من ذکر و انثی و جعلناکم شعوبا و قبائل لتعارفوا ان اکرمکم عند الله اتقاکم ان الله علیم خبیر»
“হে মানুষ! আমরা তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, এবং তোমাদের জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন একে অপরকে চিনতে পারো। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ভীরু। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী।”
আল্লাহ মানুষকে মানবিক দিক থেকে সমানভাবে সৃষ্ট করেছেন, এবং মূল্যায়নের মাপকাঠি নির্ভর করে কেবল তাদের ভীরুতা ও নৈতিকতার উপর। ফেমিনিজম যদি নারীর মান, মর্যাদা ও মানবিক ভূমিকা শুধু লিঙ্গের ভিত্তিতে হ্রাস করে, তা তার জন্য সবচেয়ে বড় অন্যায়।
নারী ও পুরুষ মানবতার দিক থেকে সমান হলেও, তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, সক্ষমতা ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। আধুনিক ফেমিনিজমের কিছু প্রবণতা সমতার নামে এই পার্থক্যকে মুছে দেয় এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। আসল সমতা মানে হলো মানুষের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা, নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাভাবিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্বীকৃতি দেওয়া। আল্লাহর দৃষ্টিতে গরিমার মাপকাঠি হলো ভীরুতা ও নৈতিকতা, লিঙ্গ নয়।



